বাণিজ্য-বিনিয়োগে ভঙ্গুর দশা, আওয়ামী মদদপুষ্ট সংগঠনগুলোকেই দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা
কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী শাসনামলের পুরো ১৫ বছরে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ছিল গোষ্ঠিতান্ত্রিকতার কবলে। একচেটিয়া সুবিধা পায় বেক্সিমকো, এস আলমসহ আওয়ামী লীগের আত্মীয়স্বজন। রিজার্ভ চুরি কিংবা শেয়ারবাজার লুটের মাঝেই চলছিল রপ্তানি হিসাবের গড়মিল। ১৫ বছরের এসব অনিয়মে যখন পুরো দেশ হাবুডুবু খাচ্ছে তখন শুধু পাচার হয় ২৮ লাখ কোটি টাকা। এর জন্য ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক বলয়ে থাকা বাণিজ্যিক সংগঠনগুলোর মুখে কুলুপ দেয়াকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। আর সংস্কারের মাধ্যমে এসব অনিয়ম বন্ধ করা না গেলে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ঠিক হবে না বলে সতর্ক করছেন অর্থনীতিবিদরা।
অপরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়নে ১৫ বছরে তলানিতে অর্থনীতি
হাট বাজারের খরচে হিমশিম খাচ্ছেন স্বল্প ও সাধারণ আয়ের মানুষ। গত ১৫ বছরে আয় যে পরিমাণ না বেড়েছে তার চেয়ে খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। আর এর প্রধান কারণ হিসেবে অপরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়নকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। শুধু সামষ্টিক অর্থনীতি নয়, আওয়ামী সরকারের আমলে সুবিধাভোগী সিদ্ধান্তে ব্যাংক ও শেয়ারবাজারের তারল্য এবং আস্থাও তলানিতে নেমেছে বলে জানিয়েছেন তারা।
‘এস আলমের শেয়ার বিক্রি ও নতুন ইস্যু করে টাকা পুনরুদ্ধার করা হবে’
২০১৭ সাল থেকে ইসলামী ব্যাংকের ৮০ শতাংশ ঋণই নিয়েছে এস আলম। করেছে লাখ কোটি টাকা আত্মসাৎ। যে কারণে ব্যাংকটি এখন ২০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতিতে রয়েছে। তাই এস আলমের শেয়ার বিক্রি ও নতুন শেয়ার ইস্যু করে সেই টাকা পুনরুদ্ধার করা হবে বলে জানিয়েছেন ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান ওয়াবেদ উল্লাহ আল মাসুদ। আর শুধু ইসলামী ব্যাংকসহ অন্যান্য ৫ ব্যাংকের বিষয়ে নতুন কৌশল নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
খেলাপি ঋণের সব তথ্য সামনে আনলে ভয়াবহ তথ্য মিলবে!
দেশের ব্যাংকখাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা বিপুল অঙ্কের ঋণ খেলাপি। যা ১৫ বছরে বেড়েছে দুই লাখ ৬২ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা। আর গেল সেপ্টেম্বর শেষে বিতরণ হওয়া মোট ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮২১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ঋণের মধ্যে ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশই খেলাপি। দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এই খেলাপি ঋণ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেড়েছে বেপরোয়া গতিতে। ব্যাংকাররা বলছেন, খেলাপি ঋণের তথ্য যেভাবে গোপন করা হয়েছে তা যদি পুরোপুরি সামনে আনা হয় তাহলে আরও ভয়াবহ তথ্য মিলবে।
গত সরকারের মসনদ মজবুত রাখাই মুখ্য কাজ ছিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের!
আওয়ামী লীগ সরকারের মসনদ মজবুত রাখতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ কারণে সরকারের আনুকূল্য পাওয়া এস আলমের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকের গ্রাহকরা এখন আছেন মহাবিপাকে। বিশেষ করে ইসলামি ও সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক ভুগছে চরম তারল্য সংকটে, চাপে আছে অন্তত তিন হাজার কর্পোরেট হিসাব। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি তারল্য সংকট প্রভাব ফেলবে ব্যবসা-বাণিজ্যে।
ইসলামী ব্যাংকের ঋণের অর্ধেকের বেশি এস আলমের দখলে: চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ
ইসলামী ব্যাংকের মোট ঋণের অর্ধেকের বেশি এখন এস আলমের দখলে। এতে ব্যাংকটির দৈনিক লেনদেন ঘাটতি এখন ২ হাজার কোটি টাকা। ফলে এস আলমের সকল সম্পদের হিসাব বের করার উদ্যোগ নিয়েছে নতুন পর্ষদ। আজ (বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সাথে বৈঠক শেষে এ কথা জানায় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ। এছাড়া নিয়োগ ও ব্যবস্থাপনা, বিনিয়োগ ও ঋণ এবং তহবিলের নিরীক্ষা করা হবে বলে জানান তিনি।
এস আলমের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে অনুসন্ধান শুরু
এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলমসহ তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিদের প্রতারণা, জালিয়াতি ও হুন্ডির মাধ্যমে ১ লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এস আলমের কোনো সম্পদ না কেনার পরামর্শ গভর্নরের
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশের স্বার্থে অন্য কেউ যেন এস আলমের সম্পদে হাত না দেয় অথবা সম্পদ না কিনে। এই সম্পদগুলো আমাদের ডিপোজিটদের টাকা ফেরত দেয়ার জন্য ব্যবহার করতে চাই। আর সেজন্য এস আলমের কোন সম্পদ না কেনার পরামর্শ দিয়েছেন গভর্নর। এছাড়া আমানতকারীদের একসাথে টাকা তুলতে না গিয়ে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর। সাংবাদিকদের সাথে আলোচনায় তিনি জানান, দুর্বল ব্যাংকগুলোর অবস্থা ফেরাতে আরো ৬ থেকে ৭ মাস সময়ের প্রয়োজন।
গভর্নর সাফ জানালেন, এস আলমের ব্যাংকগুলোকে টাকা ছাপিয়ে সহযোগিতা করা হবে না
ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে বৈঠক শেষে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এস আলমের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকগুলোকে টাকা ছাপিয়ে সহযোগিতা করা হবে না। আর যারা অর্থ নিয়ে ফেরত দেয়নি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলে ব্যবসায়ীরা সহায়তা করবে বলে আশ্বাস দেন বণিক সমিতির নেতারা। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিত্যপণ্য আমদানি সহজ করা, ব্যাংক সংস্কার ও ঋণের কিস্তি পরিশোধে ছয় মাস সময় দেয়ারও প্রস্তাব করেন ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জ বাজারে ৩ দিন ধরে বাড়ছে চিনির দাম
এস আলম কারখানায় আগুন লাগার পর চিনির দাম না বাড়াতে সরকারের পরার্মশ আর প্রশাসনের হুঁশিয়ারি, কোন কিছুই থামাতে পারছে না ব্যবসায়ীদের। সংকটের অজুহাতে খাতুনগঞ্জের বাজারে গত ৩ দিন ধরে বাড়ছে চিনির দাম।