৩টি গ্রামের ১২৬ একর জায়গায় সুসজ্জিত ৮২টি বিল্ডিং। ভেতরে রয়েছে জিমনেশিয়াম, বাইরে নদীর ধার ঘেঁষে ওয়াকওয়ে। প্রথম দেখায় মনে হতে পারে বড় কোনো আবাসন প্রকল্প। তবে রংবেরংয়ের জামা আর বুকে বিভিন্ন দেশের পতাকা দেখে ভেঙে যাবে ভুল। কারণ বেজে উঠছে অলিম্পিকের দামামা, ১৯ দিনের এই যুদ্ধে অংশ নিতে প্রস্তুত ২০৬টি দেশের সাড়ে ১০ হাজার অ্যাথলেট।
১০০ বছর আগে প্যারিস অলিম্পিকে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো তৈরি করা হয় অলিম্পিক ভিলেজ। এরপর থেকে প্রতিটি আসরেই ভিলেজের মাধ্যমে অ্যাথলেটদের আবাসনের ব্যবস্থা করছে আয়োজক দেশ। শতবছর পর প্যারিসে অলিম্পিক ফিরলেও এবারের ভিলেজ অনেকটাই ব্যতিক্রম। কারণ এতোগুলো ভবনে ব্যবহার করা হয়েছে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি। ভবন তৈরিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করায় কার্বন নিঃসরণ কমেছে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। পাশাপাশি ৭৫ শতাংশ পুনঃপ্রক্রিয়াজাত উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে ভবন তৈরিতে।
প্যারিস অলিম্পিক পরিবেশ বিভাগের পরিচালক জর্জিনা গ্রেনন বলেন, ‘যেখানে ক্রীড়াবিদরা থাকছেন, সে ভবনের প্রতি বর্গমিটারে ৩০ শতাংশ কম কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে। অবকাঠামো তৈরিতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। বিশ্বের কাছে আমরা প্রমাণ করে দিলাম, এভাবেও কাজ করা সম্ভব।’
মার্কিন ম্যাগাজিন ফোর্বসের প্রতিবেদন বলছে, অলিম্পিক ভিলেজে অনেক স্থানেই ব্যবহার করা হয়নি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। প্রতিটি ভবন ঠান্ডা রাখতে রয়েছে ছাদ বাগান। ৮২টি বিল্ডিংয়ের ৩ হাজার অ্যাপার্টমেন্টে রয়েছে ১৬ হাজার বিছানা। ২০২১ সালের টোকিও অলিম্পিকের পর এবারো বিছানাগুলো তৈরি করা হয়েছে কার্ডবোর্ড দিয়ে। গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক ও প্যারা অলিম্পিকের পর বিছানাগুলো পুরোপুরি পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করা হবে। মূলত কাঠের বদলে কার্ডবোর্ডের বিছানাগুলো পরিবেশ উপযোগী।
ক্রীড়াবিদদের সুস্বাস্থ্যের জন্য চাই ভালো খাবার। মূল ডাইনিং হলে একসঙ্গে বসতে পারবেন ৩ হাজার ৫০০ জন। প্রতিদিন অ্যাথলেটদের সরবরাহ করা হবে ৪০ হাজার খাবার, যাতে থাকবে ফ্রেঞ্চ, এশিয়ান, আফ্রো ক্যারিবিয়ান ও ওয়ার্ল্ড কুজিনের ৫০০ রেসিপি। ডিম, দুধ ও মাংসের মতো প্রাণিজ আমিষের সবকিছুই সরবরাহ করা হবে ফ্রান্স থেকে। এছাড়া এক তৃতীয়াংশ খাবারই নিরামিষ। ভিলেজের চারপাশে স্থাপন করা হয়েছে ২শ পানি, জুস ও সোডা ভর্তি জার। ভিলেজ কমপ্লেক্সে বায়ুমান নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়েছে আউটডোর এয়ার ফিলটার। সব ধর্মের মানুষের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে আলাদা প্রার্থনার স্থান।
গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের পর শুরু হবে প্যারা অলিম্পিক, যা শেষ হবে ৮ সেপ্টেম্বর। প্যারা অলিম্পিকের ক্রীড়াবিদরাও ব্যবহার করবেন এই অলিম্পিক ভিলেজ। প্যারিস অলিম্পিক আয়োজক কমিটি জানিয়েছে, দুটি মেগা ইভেন্ট শেষে ৬ হাজার মানুষের অফিস স্পেস হিসেবে ব্যবহৃত হবে ভিলেজটি। অন্যদিকে আড়াই হাজার নতুন ঘর পাবেন আরো ৬ হাজার গৃহহীন মানুষ। ফ্রান্সের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল একক প্রকল্প অলিম্পিক ভিলেজ তৈরিতে খরচ হয়েছে ১৮৫ কোটি ডলার।