আর্থিকভাবে দুর্বলতা থাকলেও খেলোয়াড়দের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে বড় ভুমিকা রাখছেন কোচরা। খেলোয়াড়রাও এখন সুযোগ পাচ্ছেন ইউরোপের বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নেয়ার।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বেনিন। যে দেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। ১৯৯০ এর দশকে বেনিনের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটলেও এটি আফ্রিকার দরিদ্রতম দেশগুলির একটি। বেশিরভাগ কৃষক এখনও যেখানে দিনমজুরি করে জীবনব্যবস্থা অতিবাহিত করেন। সেখানে খেলাধুলার কথা ভাবা অনেকটা বিলাসিতা।
বেনিনের রাজধানী পর্তো নোভোতে বসবাস ৪২ বছর বয়সী কাউকাম কামটচুয়েং নামের রোলার হকি প্রশিক্ষকের। 'কোটোনোর এসা সেন্টার' নামে এক প্রতিষ্ঠান চালান তিনি। যেখানে দরিদ্র শিশুদের আত্মনির্ভরশীল করতে লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলার প্রতি উৎসাহ সৃষ্টি করতে দিনরাত প্ররিশ্রম করে যাচ্ছেন কাউকাম।
সম্প্রতি রোলার স্কেটিং হকি খেলার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে শিশুদের। কাউকাম নিজেই প্রশিক্ষণ দেন সেসব শিক্ষার্থীদের। বেনিনের স্পোর্টস ল্যান্ডস্কেপে রোলার হকি প্রবর্তন করেছেন মূলত তিনিই। যদিও খুব বেশিদিন হয়নি খেলাটির সঙ্গে পরিচিত হয়েছে বেনিনের মানুষ। এর মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে রোলার হকি। ভবিষ্যতে চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্ট আয়োজন ও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখেন কোচ।
কাউকাম বলেন, হকি নিয়ে কাজ করা শুরু করেছি প্রায় এক বছর হয়েছে। কিন্তু এত কম সময়ের মধ্যে আমাদের একটি ক্লাব হয়েছে। যেখানে শ'খানেক খেলোয়াড় আছে। সম্ভবত খুব শিগগিরই প্রতিযোগিতামূলক চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করতে পারব। তবে মূল লক্ষ্য হল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া। কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ বছর সময় লাগবে এই শিশুদের সেভাবে গড়তে। এখানে এমন অনেক শিশু আছে যাদের দক্ষতা ইউরোপেও দেখিনি। যেকারনে ভবিষ্যতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ব্যাপারে খুবই আশাবাদী।
কাউকামের পাশাপাশি বাৎসরিক ছুটির সময় ইউরোপিয়ান কোচরা ফ্রিতে কোচিং করাতে আসে বেনিনের খেলোয়াড়দের। এতে তারা দেশে থেকেই আন্তর্জাতিকভাবে দক্ষ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
কোচ কাউকামের প্রভাব বেনিনের সীমানা পেরিয়ে ঠেকেছে ইউরোপে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রদর্শিত বেনিনের খেলোয়াড়দের হকির দক্ষতায় মুগ্ধ ইউরোপীয় কোচরা। বেশ কয়েকজন তরুণ খেলোয়াড় ইউরোপের কয়েকটি দেশে লিগে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন।
খেরোয়ার ড্যামিয়েন আকুয়েতে বলেন, 'আমি প্রথম যখন এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এসেছিলাম স্কেট কীভাবে করতে হয় জানা ছিল না। কিন্তু হঠাৎ, একদিন তারা আমাকে স্কেট দিল। পরে স্কেটিং শুরু করলাম, কয়েকদিন খুব আঘাত পেয়েছি। দুই সপ্তাহ পরে আমার আয়ত্তের মধ্যে চলে এসেছে।'
পশ্চিম আফ্রিকার ক্ষুদ্র এই দেশটি একদিন হকির মাধ্যমে বিশ্ব পরিমণ্ডলে আলাদাভাবে নিজেদের অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাবে এমনই আশা কোচ ও খেলোয়াড়দের।