মুশফিকের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার গল্প শোনালেন তার শৈশবের কোচ

মুশফিকুর রহিমের শৈশবের কোচ মোহাম্মদ মতিউর রহমান
মুশফিকুর রহিমের শৈশবের কোচ মোহাম্মদ মতিউর রহমান | ছবি: এখন টিভি
0

বাংলাদেশ ক্রিকেটের "মিস্টার ডিপেন্ডেবল" মুশফিকুর রহিম শততম টেস্ট খেলার দ্বারপ্রান্তে, এটা সবার জানা। তবে ক্রিকেটার মুশফিকের শুরুর গল্পটা অনেকটাই অজানা। দীর্ঘদিন টাইগার ক্রিকেটের ভরসা হয়ে থাকা মুশফিকুর রহিমের ক্রিকেটার হিসেবে বেড়ে ওঠা, ক্যারিয়ারের নানা উথান-পতন আর ঘুরে দাঁড়ানোর অজানা গল্পগুলো একান্ত সাক্ষাৎকারে এখন টিভিকে জানিয়েছেন তার শৈশবের কোচ মোহাম্মদ মতিউর রহমান।

মাইলফলক গড়ার অপেক্ষায় থাকা মুশফিকের প্রথম কোচ মতিউর রহমান। শিষ্যের এমন অর্জনের পেছনের গল্প বলতে গিয়ে কিছুটা আবেগ আক্রান্ত।

দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্টের দ্বারপ্রান্তে মুশফিকুর রহিম। খেলার প্রতি নিবেদন আর নিষ্ঠায় ক্রিকেটারদের জন্য উদাহরণ হয়ে ওঠা মুশফিকের মিস্টার ডিপেন্ডেবল হয়ে ওঠার সফলতার বাইরেও অনেক না বলা গল্প আছে। লর্ডস থেকে শুরু আর হোমগ্রাউন্ড মিরপুরে ইতিহাস গড়ার সন্নিকটে দাঁড়িয়ে থাকা মুশফিকের লম্বা যাত্রায় আছে নানা উথান-পতন আর প্রতিবন্ধকতার গল্পও।

২০০০ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়া। শারীরিক ডিজঅ্যাডভান্টেজের পরেও শুধুমাত্র অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর অনুশীলনে শামসুর রহমান, সোহরাওয়ার্দী শুভদের ব্যাচ থেকে সবার আগে জাতীয় দলে সুযোগ পান মুশফিক। তবে তাতেই বাঁধে বিপত্তি।

কোচ মতিউর রহমান বলেন, ‘অন্যদের তুলনায় তার শারীরিক ডিজঅ্যাডভান্টেজ ছিলো। কিন্তু মুশফিক ছোট থেকেই বুঝা গিয়েছিলো সে ভবিষ্যতে একজন বড় প্লেয়ার হবে। তার ফোকাসিং, তার এটেনশন একদিন তাকে অনেক বড় করবে। সে যে সময় বাংলাদেশ টিমে চান্স পায় সেটা আমার মনে হয় একটু তাড়াতাড়ি হয়ে গিয়েছিলো।’

অল্প বয়সেই জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর বাজে পারফরম্যান্সে দ্রুতই ছিটকেও পড়েন দল থেকে। ফর্মে ফিরতে ঘরোয়া ক্লাবের লোভনীয় প্রস্তাব ঠেলে আবারও বিকেএসপিতে শৈশবের গুরুর সান্নিধ্যে ফেরেন মুশি।

মতিউর রহমান বলেন, ‘তখন বিপিএল প্রিমিয়ার লিগে খেলার সুযোগ পেয়েছে। তখন আমি ছিলাম ওই দলের কোচ। তখন বললো স্যার এটা বড় সুযোগ। আমাকে দলে রাখেন। তখন আমি বললাম তুমি ওখানে ৮ লাখের মতো পাবে সেটা মিস করার দরকার কি? তখন বললো স্যার আমার টাকার দরকার নেই। আমি আপনার সঙ্গে থাকতে চাই যাতে আমার ভুলগুলো আরও ঠিক করে নিতে পারবো। পরবর্তীতে সে প্রিমিয়ার লিগে হাইয়েস্ট স্কোরার হয়। পেপারে লিখা হয়েছিলো মুশফিক এগেইন ব্যাক টু ন্যাশনাল টিম।’

আরও পড়ুন:

শুধু উইকেটের সামনে নয় উইকেটরে পেছনেও গ্লাভস হাতে খারাপ সময় পার করেছেন মুশফিক। তবে সেখানেও ত্রাতার ভূমিকায় পেয়েছেন ছোটবেলার কোচকে।

তিনি বলেন, ‘মুশফিক কিন্তু স্পিনে স্পেশাল কিপার বলে আমি মনে করি। পেসে মিঠুনও ভালো কিপার। একজন কোচ হিসেবে আমি দেখতে পারছি দুজনেই মন খারাপ করছে। তখন আমি বললাম যে মিঠুন তোর বড় ভাই সে, তুই একটু ব্যাটিং কর মন দিয়ে। ও একটু কিপিংটা করুক। সে তখন বড় ভাইয়ের জন্য উইকেট কিপিং প্লেসটা ছেড়ে দেয়।’

এরপর সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে পারফরমেন্সের ধার বেড়েছে। দলের বিপর্যয়ে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন বারবার। কোচ মতিউর রহমানের কাছে মুশফিক কেবল বাংলাদেশেরই নয় বরং বিশ্ব ক্রিকেটের কিংবদন্তিদের সঙ্গে তুলনীয়।

মতিউর রহমান বলেন, ‘ভারতের দিকে যদি তাকাই বিপদের মুখে ওদের সবচেয়ে ঐতিহাসিক ক্রিকেটার যারা আছে যেমন সুনীল গাভাস্কার। মুশফিক আমাদের বাংলাদেশের জন্য সেই জিনিস। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে যখন ট্রাবল চলছিলো তখন তার টিমে একজন ছিলো যে পুরো টিমকে ধরে রেখেছিলো। সেটা কে ছিলো? দিলীপ ম্যান্ডিজ। মুশফিক হলো বাংলাদেশের সুনীল গাভাস্কার ও দিলীপ ম্যান্ডিজ। একজন কোচ তো অনেককেই কোচিং করায়, সবাই কি মুশফিক হয়?’

খুনসুটিতেও কম যান না মুশি। স্মৃতিকাতর হয়েও শিষ্যের শততম টেস্টের গল্পে ফিরেই আবারো গর্বিত অভিব্যক্তিতে ফিরলেন শৈশবের কোচ।

কোচ মতিউর রহমান বলেন, ‘তার যখন বিয়ে হয় তখন হলুদের প্রোগ্রামে আমার কি আচরণ, আমি কিভাবে ছেলেদের সঙ্গে কোচিং করানোর সময় কথা বলি এটা নিয়ে একটি নাটিকা করেছিলো। এটা সে আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলো সে আমাকে কোন জায়গায় রাখে। সে যতদিন খেলতে পারবে ততদিন খেলুক। ওকে দেখে জুনিয়র ব্যাটসম্যানদের ওকে দেখে অনেক কিছু শেখার আছে।’

ইএ