প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকা ইনকাম করি ওকে দেই ২০০-৩০০ টাকা। এখন একটা ঘর যদি কেউ করে দেয় খুব ভালো হয়।
সিলেট শহর থেকে প্রায় ৪০ মাইল দূরে মৌলভীবাজারের করিমপুর গ্রাম। প্রধান সড়ক থেকে আরও মাইল খানেক আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুই কামরার ছোট্ট একটি বাড়ি। যে বাড়িতেই বেড়ে ওঠা সদ্য যুব এশিয়া কাপের নায়ক ইকবাল হাসান ইমনের।
৪ ভাই, ২ বোন সাথে বাবা মা, আট সদস্যের বড় পরিবারে ইকবাল যেন চকচকে সোনা। বল হাতে ছুটে চলেছেন লাল-সবুজ পতাকাকে বিশ্ব মানচিত্রে উজ্জ্বল করতে। ছেলে যখন বল হাতে গল্প লিখতে ব্যস্ত। তখন বাড়ির উঠোনে বসেই বাবা শোনালেন পর্দার আড়ালের কথা।
ইমনের বাবা আবু বকর বলেন, ‘বাবা মা তো আছেই সঙ্গে গ্রামবাসী, স্যাররা যেভাবে ওকে সহযোগিতা করেছে আমার ছেলে সেইভাবেই জয় এনেছে।’
ছেলেকে ক্রিকেটার বানাতে বেশ ত্যাগ স্বীকার করেছেন বাবা। নিজের উপার্জনের সিংহভাগই দিয়ে দিতেন ইমনের ক্রিকেটে। ছেলেকে ক্রিকেটার বানাতে খেয়ে না খেয়ে বছরের পর বছর পার করেছে পুরো পরিবার।
ইমনের বাবা বলেন, ‘তিনবেলার খাবারে একবেলা খেতাম বাকি বেলাগুলো না খেয়ে থাকতাম। তিন থেকে চার মাস পর পর জুতা লাগে। জুতার দাম ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা দিতে আমর কষ্ট হতো।’
আবু বকর নিজে ক্রিকেট না বুঝলেও ছেলেকে রঙিন পর্দায় দেখার স্বাদ মেটাতে কিনেছেন ছোট্ট একটা টেলিভিশন।
ইমনের বাবা বলেন, ‘আমি ছেলেকে দেখার জন্য একটা ছোট টিভি নিয়েছি। আমার ছেলেকে দেখতে ভালোই লাগে। দশজনের সাথে মিশছে এইটাই দেখতে ভালো লাগে।’
দুই ঘরে পরিবারের ৮ সদস্যের বাস। জিজ্ঞেস করতেই যেন আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন বাবা। পরিবার নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে তাই একটি বাড়ির আবদার করেছেন এখন টিভির ক্যামেরায়।
ইমনের বাবা বলেন, ‘মাত্র তিন শতাংশ জায়গার উপর আমরা এই ফ্যামিলিটা আছি। আমাদের চলাফেরা অনেক কষ্ট হয়। হয়ত সবার চাওয়া পূর্ণ নাও হতে পারে। আমি আবদার করবো যে আমার ঘরটা যদি মেরামত বা বানিয়ে দেন।’
এদিকে ছেলের হাত ধরে এশিয়া কাপ জয়ের স্মৃতিচারণ করেছেন মা শাহনাজ বেগম। হাসি-কান্নার মিশ্রিত সে দিনের কথা এখনো ভেসে ওঠে গর্বিত মায়ের চোখে।