বিগত সরকারের আমলে ক্রিকেটে সফলতার ঘটনা গুণে গুণে কয়েকটা। তবে, ব্যর্থতার পাহাড় নিয়েই, বিসিবির তহবিল বেড়েছে বহুগুণ। তবে এখানকার আয়-ব্যয় কিংবা প্রকল্পের ব্যপারে সঠিক জবাবদিহিতা ছিল না। জবাবদিহিতার অভাব ছিল ক্রিকেটারদের পারফরমেন্সের ক্ষেত্রেও। ঘরোয়া লিগের মান, পাইপ লাইনে ক্রিকেটারের অভাব অর্থাৎ দেশের ক্রিকেট উন্নয়নেই ছিল বোর্ডের যত অনীহা।
দেশের ক্রিকেটের মান উন্নয়নের চেয়ে শেখ হাসিনা সরকারকে তুষ্ট করতেই বেশি আয়োজন ছিল বোর্ডের। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালে পূর্বাচলে নেয়া হয় দেশের ক্রীড়াঙ্গনে সবচেয়ে উচ্চভিলাষী প্রকল্প। নাম দেয়া হয় শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ৩ হাজার ৭শ' শতাংশ জায়গা নিয়ে করা প্রকল্পটির নকশা করা হয় আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকার আদলে। খরচ ধরা হয় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ফলে অনিশ্চিত ব্যয়বহুল প্রকল্পটি।
বিসিবি'র সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমাদের পূর্বাচলে স্টেডিয়ামের জন্য যে টেন্ডার প্রসেস ছিল সেটার লাস্ট ডেট ছিল শুক্রবার তা আমরা ক্যান্সেল করে দিয়েছি।’
২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে ২২ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে কক্সবাজারে নির্মিত হয় শেখ কামালে ক্রিকেট স্টেডিয়াম। তবে, নির্ধারিত সময় কাজ শেষ না হওয়ায় তখন বিশ্বকাপের কোন ম্যাচ মাঠে গড়ায়নি। এখন পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। প্রকল্পের ২২ কোটি টাকাই এখন জলে।
স্টেডিয়ামের সঠিক সংস্কার না করে নতুন প্রকল্পের আরেক বলি বগুড়া শহিদ চান্দু স্টেডিয়াম। একসময় আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করা স্টেডিয়ামটি অবব্যহৃত থাকে গত আওয়ামী সরকারের আমলে। সঠিক পরিচর্চার অভাবে বেহাল দশা নারায়নগঞ্চের ফতুল্লা স্টেডিয়ামও। অথচ এখানেও আন্তর্জাতিক ম্যাচ হতো নিয়মিত।
অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে গত সরকারের আমলে আরও একধাপ এগিয়ে ছিল ক্রীড়া পরিষদ ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। চর্চা থেমে ছিল না সাবেক সরকার প্রধানের পরিবারের নামে অবকাঠামো নির্মাণে। গোপালগঞ্জে ২০১৩ সালে নির্মিত শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণে ব্যয় হয় ১০৫ কোটি টাকা। তবে, ব্যয়বহুল স্টেডিয়ামটিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ তো দূরের কথা, মাঠে গড়ায়নি জাতীয় পর্যায়ের কোন খেলা।
দেশে প্রত্যেক উপজেলায় শেখ রাসেলের নামে মিনি স্টেডিয়াম করার পরিকল্পনা হাতে নেয় ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। প্রথম ধাপে ১২৫টি সম্পূর্ণ হলে, দ্বিতীয় ধাপে ১৬শ’ কোটি টাকা ব্যয় আরও ১৮৬টি উপজেলা প্রকল্প হাতে নেয় সাবেক সরকার। তবে, এসব প্রকল্পে অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে অভিযোগ আছে। অন্যদিকে, সরকার পতনে অনিশ্চিয়তা তৈরি হয়েছে প্রকল্পগুলোতে।
উপজেলা মিনি স্টেডিয়াম প্রকল্প পরিচালক মাহবুব মোর্শেদ সোহেল বলেন, দ্বিতীয় ধাপের প্রকল্প ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে নির্ধারিত ছিল। ১৮৬টি উপজেলায় প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। এতে ১৬শ’ ৪৯ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়।
ক্রীড়াখাতে ব্যয়বহুল সংস্কার প্রকল্প বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। ৯৯ কোটি টাকা বাজেট বেড়ে হয়েছে ১৫৯ কোটি টাকা। তবুও ৩ বছর ধরে চলা কাজ এখনও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো। এই প্রকল্পের বেশকিছু কাজে জড়িয়ে আছেন আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত আলী সিকদারের প্রতিষ্ঠান। জড়িত আছেন বিসিবির পরিচালক মাহমুব আনামও।
এছাড়া বিভিন্ন জেলায় কোটি কোটি টাকা ব্যয় সুইমিংপুল, জিমনেশিয়ামসহ একাধিক প্রকল্প করা হয়েছে। যেগুলো এখন ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া থেকে শুরু করে যারা জড়িত ছিল বা আছে সকলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত।'
ক্রীড়া বিশ্লেষক শামীম চৌধুরী বলেন, ‘কখনো ক্রীড়া পরিষদ ফেডারেশনের চাহিদা অনুযায়ী প্রকল্প হাতে নেয় না।’
দুর্নীতি ও অনিয়মে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও। অর্থ লুটপাটের কারণে ফিফার থেকে নিষেধাজ্ঞাও পেয়েছে ফেডারেশনটি।