ঢাউস আকারের এই বিলবোর্ড, ব্যানার-ফেস্টুন কিংবা প্ল্যাকার্ড- আসন্ন নির্বাচন ঘিরে যে চেহারা তৈরি হয়েছে অলি-গলি আর সড়কের মোড়ে মোড়ে, সেখানে একটা বড় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই।
কারণ এই ঘোষণার মধ্য দিয়েই নির্বাচনি শামিয়ানার নিচে পড়বে পুরো দেশ, বলবত হয়ে যাবে আচরণবিধিসহ নির্বাচনি সকল আইন। নির্বাচন কমিশনের অধীনে এসে পড়বে পুরো প্রশাসন, তফসিলের গেজেটের সঙ্গে সঙ্গে গেজেট হবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ, মাঠ প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের নাম।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আনুষ্ঠানিক এই নির্বাচন যাত্রার উদ্দেশ্য সবার জন্য একটা সমতল মাঠ তৈরি করা।
নির্বাচন বিশ্লেষক ড. মো. আব্দুল আলীম বলেন, ‘এ যে হাজার হাজার পোস্টার, রঙিন পোস্টারও আছে এগুলো সব সরিয়ে ফেলবে। অর্থাৎ প্রত্যেকটা আসন একবারে ক্লিন হয়ে যাবে কোনো প্রচারণা সামগ্রী থাকবে না। ওইটা দিয়ে একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে। তারপর প্রতীক বরাদ্দের আগ পর্যন্ত কোনো প্রার্থী, কোনো দল কোনো ধরনের প্রচারণা করতে পারবে না। অর্থাৎ ক্যাম্পেইনের মত করতে পারবে না। তারা হয়ত বাড়ি বাড়ি যেতে পারবে। তারা ঘরোয়া বৈঠক, উঠান বৈঠক করতে পারবে। কিন্তু কোনো রকম প্রচারণা সামগ্রী দিয়ে, ব্যানার দিয়ে, লিফটলেট দিয়ে, ফেস্টুন দিয়ে কোনোরকম প্রচারণা করতে পারবে না।’
নির্বাচনি আইনে প্রচার-প্রচারণা কিংবা ভোট গ্রহণের জন্য বেঁধে দেয়া নীতিমালা না মানাকে অপরাধ হিসেবেই বর্ণনা করা হয়েছে। যার শাস্তি হিসেবে প্রার্থিতা বাতিলসহ জরিমানা কিংবা কারাদণ্ডও রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রতিটি আসনে যেভাবে সম্ভাব্য অনেক প্রার্থী ভোটের প্রতিযোগিতায় ব্যানার-ফেস্টুনের প্রতিযোগিতায়ও রয়েছে, সেখানে নির্বাচন কমিশন যে পর্যন্ত চূড়ান্ত প্রার্থিতা ঘোষণা না করছে, সে পর্যন্ত এসব আইন বাস্তবায়নের উপায় কী?
নির্বাচন বিশ্লেষক জেসমিন টুলী বলেন, ‘প্রার্থী না হলে তো আর কাউকে করা যাচ্ছে না। ইন জেনারেল সবাইকে বলা যায় যে, আপনারা এগুলো সরান। যদি নিজ দায়িত্বে না করে তখন একটা নোট রাখা দরকার যে, পরে যদি উনি প্রার্থী হন তখন বলা যায় যে আপনি এ নির্দেশটা মানেন নি কেন। সেটা তার জন্য খুব একটা ভালো দিক হবে না। ভোটাররা কুঝবে যে ইনি যদি প্রার্থী হন তাহলে তিনি তো আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না। নির্বাচনের কমিশনের নির্দেশনা যথাযথভাবে মানে না। তখন তারা ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে তো চিন্তা করবে।’
তফসিল ঘোষণার পরপরই সরকার ঘোষিত ৯ লাখ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী মোতায়েনের চূড়ান্ত রূপরেখা নির্বাচন কমিশনে উপস্থাপন করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারপরই জানা যাবে, নির্বাচনি টাইমলাইনে কখন, কোথায়, কীভাবে মোতায়েন হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতের সকল বদনাম ঘুচিয়ে প্রশাসন কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঘুরে দাঁড়াবার মোক্ষম সময় আসন্ন এ নির্বাচন।
নির্বাচন বিশ্লেষক জেসমিন টুলী বলেন, ‘অতীতে আমাদের খুব তিক্ত অভিজ্ঞতা। আমরা প্রশাসনকে দোষারোপ করি, আর প্রশাসই নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে, অথবা নষ্ট করেছে। ম্যানুপুলেশন যেটাকে বলা হয়। প্রশাসনেরও ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এটা। প্রশাসন যদি এ চ্যালেঞ্জ নিয়ে থাকে যে, আমারদের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করা না হয় আমরা সঠিক নির্বাচন করতে পারি।’
তফসিল ঘোষণার পর থেকে কমিশন ঘোষিত প্রচার প্রচারণার বেঁধে দেয়া সময়ের আগ পর্যন্ত শহর-নগরের মানুষ রেহাই পাবে সভা সমাবেশের ভোগান্তি থেকেই। এরই মধ্যে বেআইনি ও অনুমোদনহীন জনসমাবেশে বিধিনিষেধ জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন।




