সেপ্টেম্বরে সাতটি খাতে মঙ্গোলিয়ায় কর্মী পাঠানোর অনুমোদন দেয় জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো। বহির্গমনের ছাড়পত্র পায় মেসার্স স্টারলিং ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামের ঢাকার একটি রিক্রুটিং এজেন্সি। ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী বাংলাদেশি কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় ধরা হয় প্রায় ২৪ কোটি টাকা। নিয়োগদাতা হিসেবে দেখানো হয় মঙ্গোলিয়ার এলবি প্লাটিনাম লাইন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে।
বহির্গমন অনুমোদন পত্রে উল্লেখ করা হয়, কর্মীরা মঙ্গোলিয়ায় পৌঁছার পর মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন দাখিল করবে বাংলাদেশ দূতাবাস রিয়াদ। এছাড়া ফ্লাইট সিডিউল ও কর্মীর তালিকা মঙ্গোলিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসে দাখিল করতেও বলা হয় সেখানে। অথচ দেশটিতে বাংলাদেশ দূতাবাসই নেই। সৌদি আরবের রিয়াদের সঙ্গেও নেই এর কোনো সম্পর্ক। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ টিআইপি প্রতিবেদনে মঙ্গোলিয়াকে রাখা হয়েছে মানবপাচার ঝুঁকির দ্বিতীয় স্তরে।
একদিকে তাপমাত্রা অন্যদিকে শ্রমিকদের নিরাপত্তার ইস্যু, কর্মী পাঠানোর সক্ষমতা যাচাইয়ে রাজধানীর পুরনো পল্টনের প্রীতম জামান টাওয়ারে গিয়ে ওই রিক্রুটিং এজেন্সির কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া গেল না। ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামিন খানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ হলে তিনি নতুন ঠিকানা জানাবেন বলে ফোন কেটে দেন। হোয়াটসঅ্যাপে জানান, তিনি ঢাকার বাইরে।
এখন টিভির গন্তব্য এবার জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর কার্যালয়ে। প্রথমে গিয়ে সেখানে অনুমোদন দেয়া কর্মকর্তা পরিচালক তানজিল্লুর রহমানকে পাওয়া যায়নি। ফোনে যোগাযোগ হলে অপেক্ষা করতে বলেন তিনি। দেড় ঘণ্টা পর ফিরে এলেও ক্যামেরায় কথা বলতে রাজি হয়নি এ কর্মকর্তা। ঝুঁকিপূর্ণ দেশে কর্মী পাঠাতে অনুমতি দেয়ার আগে যাচাই বাছাই হয়েছে কি না জানতে চাইলেও এড়িয়ে যান তিনি।
তানজিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমার স্বাক্ষরে অনেক কিছু অনুমোদন হয়। আপনি মাঠ পর্যায়ে গিয়ে যা খুঁজে পেয়েছেন তা-ই প্রচার করে দেন।’
আরও পড়ুন:
বিএমইটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবদুল হাই ও উপপরিচালক জোহরা মনসুরের সঙ্গেও কথা বলার চেষ্টা করা হয়। তারাও ক্যামেরায় কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে মঙ্গোলিয়ার শ্রমিকরা চীন দূতাবাসের সহযোগিতা নিতে পারবেন বলে জানানো হয়।
মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটর থেকে ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিটে আকাশ পথে বেইজিং যাবার সুযোগ আছে। নিতে হবে চীনের ভিসা। অন্যদিকে সড়ক পথে রাশিয়ার মস্কো বাংলাদেশ দূতাবাসেও যাওয়া যায়। তবে দূরত্ব ছয় হাজার কিলোমিটারের বেশি। এ দূরত্ব ও ব্যয়বহুল পথ পাড়ি দিয়ে কীভাবে কনস্যুলার সেবা নিবেন বাংলাদেশিরা? জানতে চাওয়া হয় বেইজিং দূতাবাসের কাছে।
চীনের বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রধান সামুয়েল মুর্মু বলেন, ‘যেতে হলে দূতাবাসে আসতে হবে। যেহেতু পাসপোর্টে আইরিস বা যেটা দিতে হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট। এগুলো তো সশরীরে এসে দিতে হয়। যার কারণে ওদের বেইজিংয়ে আসতে হবে।’
অনুমোদের পর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১৫৭ জন বাংলাদেশি গেছেন মঙ্গোলিয়ায়। তবে তাদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে রিয়াদ, চীন বা হংকং কোনো দূতাবাসের কাছেই তথ্য নেই।
আরও পড়ুন:
যেখানে দূতাবাস নেই, সেদেশে কর্মী পাঠানোর অনুমোদন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা। সমস্যা হলে দায় নিতে হবে কর্তৃপক্ষকে।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলেন, ‘যেখানে আমাদের দূতাবাস নেই সেখানে আমাদের অভিবাসনটা কীভাবে হবে। অর্থাৎ আমি নিশ্চিত হতে চাবো যে এ চাহিদাটা নিয়ে এসেছে, একজন ব্যবসায়ী, বা একটা প্রতিষ্ঠান। সেখানে আসলেই সে কাজটা আছে তি না। যেখানে তাদের কর্মক্ষেত্র সেখানে আসলেই তাদের কর্মক্ষেত্র আছে।’
ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থাপক আল আমিন নয়ন বলেন, ‘যে মঙ্গোলিয়াতে আমাদের কোনো দূতাবাস, কনস্যুলেট নেই, খানে কেন এত শ্রমিক পাঠানোর উদ্যোগ নিচ্ছে রাষ্ট্র। আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে কী দেখেছে যে সেখানে শ্রমিকদের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত হবে যাওয়ার পর।’
প্রবাসীদের দিক থেকে প্রতিনিয়ত যেখানে অনিরাপত্তার অভিযোগ আসছে, সেখানে যাচাই বাছাই ছাড়াই নতুন জায়গায় কর্মী নিয়োগের অনুমোদন গন্তব্য দেশে সঠিক কর্মসংস্থানের যেমন ঝুঁকি রয়েছে তেমনি মানবপাচারকারী চক্রের হাতে পড়ার শঙ্কাও বেশি।





