ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ, মিলছে পোকা; বেড়েছে পানিবাহিত রোগ

বামে ওয়াসার ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি ও ডানে মসজিদের গভীর নলকূপ ঘিরে পানির জন্য অপেক্ষা
বামে ওয়াসার ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি ও ডানে মসজিদের গভীর নলকূপ ঘিরে পানির জন্য অপেক্ষা | ছবি: এখন টিভি
0

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করছে তা ঘোলা ও তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত, কোথাও কোথাও মিলছে পোকাও। এরমধ্যে জুরাইনের বাসিন্দাদের এ নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই। রান্নাসহ দৈনন্দিন কাজে ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি ব্যবহারে পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এই এলাকার বাসিন্দারা।

স্থানীয় মসজিদের গভীর নলকূপ এখন শেষ ভরসা। চিকিৎসকরা বলছেন, এই দূষিত পানি ব্যবহারে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, চর্ম রোগসহ নানা স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। তবে এ অভিযোগের বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি ওয়াসার দায়িত্বরত কোনো কর্মকর্তা।

পূর্ব জুরাইনের ইসলামাবাদ মসজিদের গভীর নলকূপ ঘিরে পানির বোতল, জার বা কলসি হাতে পানির জন্য অপেক্ষাই বলে দেয় কতটা দুর্দশায় দিন পার করছেন এ এলাকার বাসিন্দারা।

নিরাপদ পানির জন্য বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে জুরাইন ও মুরাদপুরের বাসিন্দাদের, সময়ও যাচ্ছে অনেক।

প্রতিদিন সকাল ৬ টা থেকে বেলা ১১টা এবং বিকাল ৪ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত এলাকাবাসী পানি নিতে পারেন মসজিদ থেকে। এখানে এক বোতল বা এক জগ পানি ১ টাকা, ৫ লিটারের বোতল দুই টাকা, ১০ লিটারের বোতল বা কলসি তিন টাকা এবং জার ভরে পানি নিলে দিতে হয় পাঁচ টাকা।

মসজিদের দেয়ালে লেখা সুবাহানাল্লাহ। এই পানি আল্লাহর নিয়ামত। পানের অযোগ্য ওয়াসার পানির পরিবর্তে দীর্ঘ ১ যুগ ধরে এলাকাবাসীর জন্য এই পানি নিয়ামতই বটে। মসজিদগুলো পানি না দিলে এলাকার মানুষের খাবার পানি পাওয়ার কোনো উপায় থাকত না বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

বাসিন্দাদের একজন বলেন, 'বড় ড্রাম কিনে নিয়েছি। সেই পানি খায় এবং গোসল করি।'

আরেকজন বলেন, ‘জল খাওয়া যায় না। এই কেনা জল নিয়ে রান্না করি।’

এখন টিভির ক্যামেরা দেখেই এ এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, বছরের পর বছর খাবার ও রান্নার পানির কষ্টে ভুগতে হচ্ছে তাদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করছে তা ঘোলা ও তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত, এখন ঘোলা পানির সঙ্গে আসছে পোকাও।

হৃষিপাড়ার ১ বছর ৩ মাস বয়সী রাইসা। তার পুরো শরীর জুড়ে চুলকানি। পুরো পরিবার ভুগছেন একই অসুখে। স্থানীয় ফার্মেসিগুলোর বিক্রির হারও বলছে এলাকায় বেড়েছে চুলকানির রোগী।

বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘বাচ্চাকে গোসল করানোর পরে চুলকানি হচ্ছে শরীরে। ওষুধ খাওয়াচ্ছি কমছে না।’

ফার্মেসির একজন বলেন, ‘এখান থেকে ওষুধ, মলম নেয়া হচ্ছে কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। অবশ্যই পানি পরিবর্তন করা উচিত।’

শুধু জুরাইন নয় এমন অভিযোগ কল্যাণপুর, তেজগাঁও, মালিবাগ, মধুবাগ, মগবাজার, খিলগাঁও, বনশ্রী, বাড্ডা, বাসাবো, মুগদা, মানিকনগর, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের।

চিকিৎসকরা বলছেন, এই দূষিত পানি ব্যবহারে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস, নানা চর্ম রোগসহ দীর্ঘমেয়াদি ক্রনিক রোগে ভুগতে পারে যে কেউ।

মেডিসিন ও স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আফতাব রাসেল বলেন, ‘দূষিত পানি ব্যবহারে বাচ্চাদের বেশি সমস্যা হতে পারে। এছাড়া বয়স্ক মানুষ এতে আক্রান্ত হতে পারে। ডায়ারিয়া জনিত রোগ হতে পারে। পানিবাহিত রোগ বেড়ে যাবে। চর্ম রোগসহ দীর্ঘমেয়াদি ক্রনিক রোগে ভুগতে পারে।’

এতসব অভিযোগ নিয়ে এবার আমরা কথা বলতে চাই ওয়াসার কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তবে দেখা মিলল না ব্যবস্থাপনা পরিচালকের। ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি দায়িত্বরত কোনো কর্মকর্তা।

তবে, তবে আমাদের কাছে অভিযোগ শুনে সঙ্গে সঙ্গেই সমাধানের আশ্বাস দেন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম শহীদ উদ্দিন।

ঢাকায় বর্তমানে পানির চাহিদা দৈনিক গড়ে ২৮০-২৯০ কোটি লিটার। ওয়াসার উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ২৯৫ কোটি লিটার পানি।

ইএ