গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ওএসডি বা বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করে রাখা হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিককে। জানা যায়, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা প্রশাসক হিসেবে বিতর্কিত দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। ঐ নির্বাচনে সরকার মনঃপূত ভূমিকা রাখায় পুরস্কারস্বরূপ ২০২১ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে সচিব হিসেবে নিয়োগ পান মাসুদ আলম ছিদ্দিক। তবে পূর্বের বিতর্ক তার পিছু ছাড়েনি।
কর্মক্ষেত্রের শেষ ছয় মাসে তিনি প্রায় দেড়শ' কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পদোন্নতি এবং অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছেন। যার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লঙ্ঘন করা হয়েছে পদোন্নতি এবং অতিরিক্ত দায়িত্বের বিধিমালা। অভিযোগ উঠেছে, এসব পদোন্নতি দেয়ার জন্য তিনি নিয়েছেন অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা।
গত ডিসেম্বরে তিনি সেসব পদোন্নতি এবং অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছেন তার মধ্যে একজন ফারজানা আক্তার। উচ্চমান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক ফারজানাকে ডিএনসিসি'র অঞ্চল-৯ এর উপ-কর কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এই পদোন্নতি প্রাপ্তদের সিরিয়ালে চার নম্বরে থাকা মোতাহার হোসেন এবং নয় নম্বরে থাকা লাকী আক্তারকে বাদ দিয়ে ১৩ নম্বরে থাকা এইচএসসি পাশ ফারজানাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন হয়েছে। পরপর দুই দিন ফারজানার সঙ্গে কথা বলতে গিয়েও তাকে ডিএনসিসি'র অঞ্চল-৯ এর অফিসে পাওয়া যায়নি। অবশেষে তৃতীয় দিন তাকে উত্তর সিটির নগর ভবনে পাওয়া গেলেও তিনি জানালেন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে তার মানা।
ফারজানা আক্তার বলেন, 'অতিরিক্ত দায়িত্বের ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলা নিষেধ আছে।'
ফারজানার মতো অতিরিক্ত দায়িত্ব পাওয়া আরেক ব্যক্তি শেখ মোহাম্মদ আলী। শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও তাকে রেভিনিউ সুপারভাইজার থেকে করা হয়েছে উপ-কর কর্মকর্তা। যে অফিসে তার থাকার কথা, পরপর দুইদিন গিয়েও তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। তার মূল কাজ আঞ্চলিক অফিসে হলেও দুই দিন গিয়েই শোনা গেলো তিনি আছেন নগর ভবনে।
এখানেই শেষ নয়, সাবেক সচিব মাসুদ আলম ছিদ্দিক বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক মজুমদারকে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারির পদ থেকে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছেন। আব্দুল খালেক মজুমদারকে তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে সহকারী সচিব ও উপ-কর কর্মকর্তা করেছেন।
এদিকে এমন অনিয়মের ব্যাপারে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, নিয়ম ভেঙে পদোন্নতি এবং অদক্ষ লোককে পদে বসালে তার কুফল ভুগতে হবে সাধারণ জনগণ তথা সিটি করপোরেশনকে।
নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আকতার মাহমুদ বলেন, 'চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী থেকে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়ে উপরের দিকে আসে, সেখানে কিছু সেবাদানের ঘাটতি থেকে যায়। কারণ প্রত্যেকেরই জানাশোনা, তার দক্ষতার একটা সীমাবদ্ধতা আছে। এটার কারণে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কিন্তু অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।'
এমন পরিস্থিতিতে ডিএনসিসি'র নতুন প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ পদোন্নতি এবং অতিরিক্ত দায়িত্ব বণ্টনের ক্ষেত্রে অনিয়মের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
মোহাম্মদ এজাজ বলেন, 'সবগুলো রিভিউ করা হবে। কোনো ধরনের অনিয়ম হলে আমরা অ্যাকশনে যাবো।'
একই সঙ্গে নতুন প্রশাসক একটি কমিটি করে পদোন্নতি এবং অতিরিক্ত দায়িত্বের বিষয়ে তদারকি করাও ঘোষণা দিয়েছেন।