ঋণখেলাপির লাগাম টানবে কে; তিন বিচারকের কাঁধে অর্থঋণের মামলার পাহাড়

অপরাধ ও আদালত , অর্থনীতি
বিশেষ প্রতিবেদন
0

মাত্র তিন বিচারকের কাঁধে প্রায় ৭০ হাজার মামলা। এভাবেই চলছে ঢাকার অর্থঋণ আদালত। ঋণ খেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে অর্থঋণ আদালতের আইন ও কাঠামোগত পরিবর্তনে গুরুত্ব দিয়েছেন আইনজীবী ও ব্যাংক কর্মকর্তারা।

আদালতের কার্যসময়ে সকাল ১১টার দিকে ঢাকা অর্থঋণ আদালত-৩ এর এজলাস কক্ষে আইনজীবীদের অপেক্ষা বিচারকের জন্য। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আইনজীবীদের মধ্যে চলছে আলাপচারিতা। তবে কিছু সময় পর আইনজীবীরা জানালেন আদালত বসবে না।

ঢাকার চারটি অর্থঋণ আদালতে তিনজন বিচারক থাকায় এভাবেই ভোগান্তিতে পড়ছেন আইনজীবী ও ব্যাংক কর্মকর্তারা। দেশের প্রায় ১০০ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ সংক্রান্ত মামলার বিচারকাজ চলে ঢাকা অর্থঋণ আদালতে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য মতে, দেশের ৬০টি ব্যাংকের ঋণ সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা দুই লাখ সাত হাজার ৫৯৩টি। যার বিপরীতে ব্যাংকগুলোর প্রায় দুই লাখ ৩৬ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা আটকে আছে। দেশে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। ২০০৯ আওয়ামী লীগের শুরুতে খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচিতে শর্ত দেয়া হয়েছে ঋণ খেলাপি ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার।

ঢাকার অর্থঋণ আদালতে ওয়ান ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের আইন কর্মকর্তারা মামলার কাজে আসছেন আদালতে। এই দুই ব্যাংকের প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার ঋণ সংক্রান্ত মামলা বিচারাধীন।

ন্যাশনাল ব্যাংকের আইন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, 'যদি আমরা মামলা না করতাম, তারা টাকা দেয়ার জন্য উৎসাহী হতো না। যেহেতু তাদের কিছু সম্পদ মর্টগেজ থাকে, সেগুলো বিক্রি করার ব্যবস্থা করা হয় এবং তাদের অ্যাটাচমেন্ট করা হয়, অন্যান্য সম্পদ যেন থাকে সেটাও অ্যাটাচমেন্টের আওতায় আনা হয়।'

ওয়ান ব্যাংকের আইন কর্মকর্তা নাজমুল আহাদ বলেন, 'যখন বিভিন্ন মেকানিজমে ঋণ আদায়ে চেষ্টা করি, সেখানে যখন ব্যর্থ হই তখন এক স্টেজে মামলা করি এবং বাংলাদেশ ব্যাকের গাইডলাইন অনুযায়ী মামলা করি। প্রতিবছর আমরা ১০০ কোটি টাকার উপরে আদালতের মাধ্যমে মামলাধীন অ্যাকাউন্ট থেকে রিকভারি করতে সক্ষম হই।'

অর্থঋণ আদালতের আইনজীবীরা বলছেন, ঋণ সংক্রান্ত মামলার জট বাড়ছে, এতে করে মুখ থুবড়ে পড়বে ব্যাংকিং খাত। বিদ্যমান আইনের সংস্কারের কথা বলেছেন তারা।

অর্থঋণ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী সওরোজ চ্যাটার্জি বাপ্পা বলেন, 'মামলার সংখ্যা অনেক। ঢাকাতেই চারটা কোর্টে দুই ধরনের মামলা হয়ে থাকে। প্রাথমিক হচ্ছে ঋণ মামলা, পরে হচ্ছে জালিয়াতি।'

অর্থঋণ আদালতের আইনজীবী মনির হোসেন বলেন, 'সমন জারি হওয়ার ৪০ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দাখিল করতে হবে। শুধু এই একটা সেকশন ঠিক করলে অর্থঋণ মামলার নিষ্পত্তি খুব দ্রুত করা সম্ভব।'

হাইকোর্টে মাত্র দু'টি বেঞ্চ রয়েছে অর্থঋণের মামলা বিচার কাজের জন্য। রিট করে বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখা হয় মামলা। খেলাপিরা এই সুযোগ নিয়ে ঋণ পরিশোধ করছে না।

সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জামিউল হক ফয়সাল বলেন, 'আইনের কিছুটা দুর্বলতা রয়ে গেছে। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় একটি বেসরকারি ব্যাংকে যারা অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন করে তারা নিজেরা এতবেশি শক্তিশালী ব্যাংক তাদের প্রস্তাব দিচ্ছে যে আপনি পুনঃতফসিলের আবেদন করেন বা এত টাকা দেন, এত টাকা দিলে আমরা আপনাকে পুনঃতফসিল করে দিবো। আমাদের তো আইনের আলোকে চলতে হয়। আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, ছোট ছোট ঋণ যাদের তারা ঋণের জালে আটকে থাকে, কিন্তু বড় বড় ঋণে উনারা এমনভাবে দিয়েছেন যেখানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে।'

এসএস