২০২৪ সালে অভূতপূর্ব ঘটনার সাক্ষী হয় বাংলাদেশ। ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে শেখ হাসিনা সরকারের কবল থেকে মুক্তির পর তৈরি হয় বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা।
সে প্রত্যাশাকে ধারণ করে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি ও জনমত তৈরিতে কাজ করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি (জানাক)। প্ল্যাটফর্মটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করা তরুণ নেতারা বলছেন, পূর্বের সকল মতাদর্শিক বিভাজনের ইতি টানতে চান তারা।
জানাকের সহ মুখপাত্র সালেহউদ্দিন সিফাত বলেন, 'আমরা পোস্ট ইডিওলজিক্যাল সিচুয়েশনে আছি। এটাকে আমরা বলছি উত্তর মতার্দশক অবস্থানে আমরা আছি। সেখানে আমরা ডান বামের যে বিভাজন, সেই বিভাজনরেখাটি আমরা রাখতে চাই না।'
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়া ছাত্রদের সামনে রেখেই নতুন দল গোছানোর কথা জানান নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তারুণ্যনির্ভর হওয়ায় এই দল রাজনীতিতে পুরনোদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে আশা তার।
সারজিস আলম বলেন, 'রাজনৈতিক দলটি আগে আসবে, তারপর এই রাজনৈতিক দলের নাম বাংলাদেশের প্রত্যন্ত প্রতিটি জায়গায় যাবে, তখন মানুষ এই নাম নিয়ে আলোচনা করবে। আমরা বিশ্বাস করি অন্য রাজনৈতিক দলগুলো পাঁচ যুগে যা করেছে এই রাজনৈতিক দল, তরুণদের নেতৃত্বে যেটা আসতে যাচ্ছে, আগামী এক যুগে তাদের শুধু স্পর্শ করবে না, তাদের ছাড়িয়ে যাবে।'
তরুণদের সমন্বয়ে নতুন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়েও চলছে নানামুখী আলোচনা। নেতা নির্বাচনে বিতর্ক উঠলেও সেটিকে দলের গণতান্ত্রিক চর্চা হিসেবেই দেখছেন সংগঠনটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন।
তিনি বলেন, 'এ ধরনের একটা প্রতিযোগিতাকে আমরা মনে করি যে, দল গঠনের জন্য এবং দলের ডেমোক্রেসিকে স্টাবলিশ রাখার জন্য ভালো। নাহিদ ইসলাম একদম সুনির্দিষ্টভাবে চলে আসছে, এরকম কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের হয়নি। কে বা কারা বিভিন্ন পোস্টগুলোতে বসবেন, এটা শুধু সদস্য সচিবের ক্ষেত্রে না, প্রতিটি পোস্টের ক্ষেত্রেই আমরা সকলের থেকে মতামত নেয়ার চেষ্টা করবো।'
দল গঠনের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে উল্লেখ করে নিজেদের নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা জানান সংগঠনটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। জানান, গণপরিষদ নির্বাচন নিয়ে কাজ করবে নতুন দল, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় হতে পারে নির্বাচনী জোটও।
আখতার হোসেন বলেন, 'নতুন একটি সংবিধানের প্রেক্ষাপটে এবং সে সংবিধানকে কার্যত প্রণয়নের দায়িত্ব যে গণপরিষদের হাতে, সে গণপরিষদ নির্বাচনের কথা আমরা বলছি। যদি গণপরিষদ নির্বাচন হয়, তার জন্য আমরা আমাদের যোগ্য প্রার্থী যারা আছে তাদের খুঁজে বের করবো। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমন অনেক মানুষের সঙ্গে আমাদের হয়তো রাজনৈতিক জোটও হতে পারে।'
দেশের গণতন্ত্র বিকাশের স্বার্থেই ছাত্রদের দলের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন দলের আদর্শিক ভিত্তি তৈরি করতে হবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে ছাত্রদের বিকল্প নেতৃত্ব তৈরির পরামর্শ তার।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, 'এই বিপ্লবের সফলতার জন্য ছাত্রদের নিরন্তর উপস্থিতি, নিরন্তর প্রেসার, নিরন্তর উপদেষ্টা এবং অবস্থান প্রয়োজন। তৃণমূল থেকে একেবারে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত বিকল্প লিডারশিপের অবস্থান তৈরি করা খুবই কঠিন ব্যাপার। রাজনৈতিক দলকে তার আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি গোছাতে অনেক সময় লাগে। এটা তো এরকম না যে, বললাম আর হয়ে গেলো।'
সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার যে লড়াই শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে, সেটি এখনও অধরা রয়ে গেলেও, নতুন দলের মাধ্যমে সকল স্তরে সাম্য প্রতিষ্ঠায় কাজ করার কথা জানান তরুণ নেতারা।