ইটের পরে ইটের পরতে সৃষ্টি মানব সভ্যতার ইতিহাস। পাথুরে যুগ পেরিয়ে সভ্যতা এগিয়েছে কাদামাটির ছাঁচে তৈরি আয়তক্ষেত্র ধরে। তাও খ্রিস্টপূর্ব সাড়ে সাত হাজার বছর আগে।
কাদামাটি শুকিয়ে তৈরি করা আয়তঘনক ইট বিবর্তনের উত্তাপে গাঁথুনি দিয়েছে নগরকে। সেই ইতিহাসের বয়সও প্রায় তিন হাজার বছর।
যুগের পরিক্রমায় স্থাপনা নির্মাণে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এই কাঁচামাল বিশ্বে বছরে প্রায় ১৬শ' বিলিয়ন পিস উৎপাদিত হয়। উৎপাদনে চতুর্থ স্থানে থেকে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩২ মিলিয়ন পিস ইট তৈরি হয়। যার বেশিরভাগই সনাতনী ড্রাম চিমনি, ফিক্সড চিমনি পদ্ধতিতে।
বর্তমানে আধুনিক জিগজ্যাগ পদ্ধতিতেও ইট উৎপাদন হচ্ছে। যা সব মিলয়ে কমবেশি আট হাজার। যদিও এরমধ্যে ৩ হাজার ৪৯১টির পরিবেশ ছাড়পত্র নেই বলে তথ্য পরিবেশ অধিদপ্তরের।
পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘অতি দ্রুত আমি ব্রিক মালিকদের সাথে বসবো। তাদের কোথায় ট্যাক্সেশনের সমস্যা রয়েছে, কোথায় যন্ত্রপাতি আনায় সমস্যা আছে সেটার ওপর জোর দিলে যদি আমরা ইটের ক্ষেত্রে বিকল্পটাকে সহজলভ্য করতে পারি তাহলে আমাদের এ লড়াইয়ে বিজয় হবে।’
ঢাকার পাশের মানিকগঞ্জের এক অটো ব্রিকসে গিয়ে দেখা গেল, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে চলছে ইট তৈরি। সারাদেশে হাইব্রিড হফম্যান কিলন ও অটোমেটিক টানেল ক্লিন অর্থাৎ অটো ব্রিকস নামে শতাধিক ভাটা উৎপাদনে রয়েছে। বছরে যাদের উৎপাদন ১৪০ কোটি পিস ইট।
তবে প্রতিবছর দেশে ইটের চাহিদা আধুনিক ইট দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয় বলে জানান অটো ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশন। তাই বিকল্প তৈরি না করে সনাতনী ইটভাটা বন্ধের বিপক্ষে মত সংগঠনের সভাপতি। পাশাপাশি অটোক্লেভড অ্যারাটেড কনক্রিট, এএসি'র মতো আধুনিক প্রযুক্তিকে স্বাগত জানানোর আহ্বান সংশ্লিষ্টদের।
বাংলাদেশ অটো ব্রিক ম্যানুফ্যাকচার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘বাংলা ভাটা যেগুলো বন্ধ হয়েছে এটা গুড সাইন এবং বাকিগুলোও বন্ধ করে দিতে হবে। আমি সাথে অনুরোধ রাখবো এগুলো বন্ধ করতে হলে সমপরিমাণ পণ্য আপনার অটোব্রিকস থেকে বের করতে হবে।’
সনাতনী ইটভাটার মালিকদের সংগঠনের সভাপতি বলেন, সরকার একেক সময়ে একেক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। স্থায়ী সমাধানে সমন্বয়হীনতা এড়িয়ে আইন প্রণয়নে অ্যাসোসিয়েশনকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান তার।
বাংলাদেশ ব্রিক ম্যানুফ্যাকচার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফিরোজ হায়দার খান বলেন, ‘আগে যিনি মন্ত্রী ছিলেন সে সময় তিনি বললেন ১২০ ফিট চিমনী পরিবেশবান্ধব। তখন ৫০-৬০ লাখ টাকা খরচ করে সেটা করলাম। আপনাদের কথায় যদি জিগজ্যাগ করি এক থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ যাবে। ৫-১০ বছর পরে যে আপনারা বলবেন না এটা পরিবেশবান্ধব না তখন তার গ্যারান্টি কী?’
২০২৭ সালের মধ্যে বায়ু দূষণকারী ইটভাটা বন্ধে সরকারি যে উদ্যোগ তা চাহিদা-যোগানের যথাযথ হিসাবে না হওয়ায় সহসাই সমাধানের আশা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। চার থেকে পাঁচ কোটি টাকায় বাংলা ইটভাটা বসানো সম্ভব, অথচ অটো ব্রিক ফিল্ডে ন্যূনতম খরচ ৫০ কোটি টাকা। মালিকদের খরচ করার অনিচ্ছা বায়ূদূষণমুক্ত ইটভাটা স্থাপনে বাধার কারণ হতে পারে বলে শঙ্কা পরিকল্পনাবিদের।