অর্থনীতি
বিশেষ প্রতিবেদন
0

উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে সংসার চালাতে টালমাটাল চাকরিজীবীরা

গত কয়েক বছর ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে টালমাটালভাবে সংসার চালাচ্ছেন চাকরিজীবীরা। আওয়ামী সরকারের আমলে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গেলে ঋণ করে জীবনধারণ করতে হয়েছে পেশাজীবী মানুষদের। যেখানে বেতন বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতি থেকে ১-২ শতাংশ বেশি হতে হয়, সেখানে খরচ কয়েকগুণ বাড়লেও কর্মজীবি মানুষের আয় বেড়েছে নামমাত্র। তাই নীতিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্যয়ের সাথে আয় বৃদ্ধির পরামর্শ দেন অর্থনীতিবিদরা।

নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামে সংসার যেন টালমাটাল। জীবনধারণের খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষ। অনেকে খাবারসহ বিভিন্ন পণ্যের ব্যবহার কমিয়ে দিয়েও টানতে পারছেন না খরচের লাগাম। সংসারের আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলানো হয়ে উঠেছে কঠিন। আয় ব্যয়ের এই বড় বৈষম্যের জের গত কয়েক বছর ধরে টানছে মানুষ।

এরমধ্যে উর্ধ্বগতির বাজারে খরচ বহনে বেশি হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বল্প বেতনের মানুষের। গত কয়েক বছরে খাদ্য তালিকা থেকে বাদ পড়েছে অনেক আমিষ। আর বাজারের ফর্দে কাঁটছাট করেই চলছে সংসারের নানা খরচ।

বাজার করতে আসা একজন বলেন, ‘বেতন বাড়ে না। যেটা আছে সেটা থেকেই মিল করে নিতে হয়।’

বাজারের দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়লেও বেতন বাড়ে না চাকরিজীবীদের। প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়লেও কর্মীর জীবনে তার সুফল মেলে না। চাকরীর বাজারে টিকে থাকতে বাড়তি চাপ কাঁধে নিয়েই চলে কর্ম জীবন। 

আরেকজন বলেন, ‘সিন্ডিকেট আছে এখনো চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। এখন এইগুলো সাপার করছি আমরা।’

কর্মজীবিদের একজন বলেন, ‘একটা মানুষের যে বেতন বাংলাদেশে তা দিয়ে চলা সম্ভব না।’

আরেকজন বলেন, ‘যা আছে সব কিছুর দাম বাড়তি সুতরাং এইটা আমাদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে।’

প্রতিবছর বেতন বৃদ্ধির কথা থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠানই কম মুনাফার অযুহাতে তা থেকে বঞ্চিত করে কর্মীদের। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান মূল্যস্ফীতি বা বাজার বিবেচনা না করেই নামমাত্র বৃদ্ধি করে বেতন।

বাজারের সাথে পরিবারের যে খরচ বাড়ে তা মেটাতে বাড়তি চাপের কথা জানান কর্মজীবিরা।

কর্মজীবিরা বলেন, ‘বছর শেষে নূন্যতম বেতন বাড়ানোর কথা সেটা থেকেও অবহেলিত থাকে। এইটা একদম সত্য কথা।’

সংসার ও বাজার খরচ মেটাতে কষ্টের কথা জানান সরকারি কর্মচারিরাও। জানান পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে পে স্কেল নীতির মাধমে তাদের কষ্ট বাড়িয়েছে।

সরকারি কর্মচারিদের একজন বলেন, ‘বেতন বৃদ্ধি পাবে বাজার দরের উপর। ৫ শতাংশ একবারে বৃদ্ধি করেছে যা আগেও পেতাম।’ 

গবেষণা বলে, স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতি থেকে ১-২ শতাংশ বেশি হতে হয়। অথচ গত দেড় যুগে ধারাবাহিকভাবে মূল্যস্ফীতি মজুরি বৃদ্ধির হার থেকে অনেক বেড়েছে।

তথ্য বলছে, শেখ হাসিনার স্বৈরাচারি শাসনামলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে। তবে সঠিক তথ্য গোপন রাখায় এই হার আরো বেশি।

তাই খরচের সাথে আয় না বাড়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের একদিকে যেমন ঋণের বোঝা বাড়ছে, তেমনি স্বাভাবিক জীবন বিপন্ন হচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে জীবন যাত্রার ব্যয় নির্বাহ করার জন্য প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার পরিবারের জন্য প্রতি বছরই কিছু বাড়তি ব্যয় করতে হয়। এই ব্যয় যেন ঠিকঠাকভাবে চালাতে পারে তার জন্য প্রতি বছরই সুনিদির্ষ্ট হারে বেতন বাড়ানো উচিত।’

অন্যদিকে নীতিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্যয়ের সাথে আয় বৃদ্ধির পরামর্শ দেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির সাথে মজুরি, বেতন ইত্যাদি বাড়ানো হয়। যাতে স্বাভাবিকভাবে ক্রয় ক্ষমতা একটা স্থির পর্যায়ে থাকে। কয়েক বছর পর পর রিভিউ করে তারপর বাড়ানো হয়।’

গত ১৫ বছরের উন্নয়নে আহারের পাত থেকে স্বাদ আর সাধ্যের উপাদান বিয়োগ করে আয় ব্যয়ের হিসাবে ভর্তুকি মেটাতেই কঠিন সময় পার করছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা‌।

ইএ