২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর। অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিক নিয়মে সকালে কাজে যোগ দেন হাজারো শ্রমিক। সন্ধ্যায় হঠাৎই ভবনের আটতলায় আগুন লাগে। মুহূর্তে তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে। শ্রমিকদের বাঁচার আকুতিতে ভারি হয়ে ওঠে নিশ্চিন্তপুরের আকাশ-বাতাস। প্রাণ বাঁচাতে ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েন কেউ কেউ। তবে, অনেকেই হন পুড়ে অঙ্গার। সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১৭ জনে। আহত হন বহু শ্রমিক। সেদিনের কথা মনে হলে আজও শিউরে ওঠেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন বলেন, ‘কিছু মানুষ লাফিয়ে পড়ছে চালের উপরে। কিছু মানুষ ভিতরে আগুনে পুড়ে গিয়েছে।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের আরেকজন বলেন, ‘মানুষ বাঁচার জন্য এত কিছু করেছে। আমরা তখন কিছুই করতে পারিনি।’
দুর্ঘটনার পর ক্ষতিপূরণের আশায় ছিল আহত শ্রমিকরা। ১২ বছরে যাদের অনেকেই মারা গেছেন। কেউ কেউ ফিরে গেছেন গ্রামে। যারা এখনো আশপাশের এলাকায় আছেন তারা চান পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান। পাশাপাশি এঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান শ্রমিক নেতারা।
শ্রমিকদের একজন বলেন, ‘যারা মারা গিয়েছে এরাই ভালো করেছে।’
শ্রমিকদের আরেকজন বলেন, ‘আমাদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিক। আমরা ঢাকা ছেড়ে চলে যায়।’
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, ‘বিগত সরকার শ্রমিকদের চিকিৎসা ও পুন্যবার্সনে যথাযথ ব্যবস্থা নেই নাই। এই সরকারের কাছে আমরা আশা করি শ্রমিকদের চিকিৎসা ও পুন্যবার্সন ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনবে।’
বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অরবিন্দু বেপারী বলেন, ‘বিগত সরকার শ্রমিক হত্যার বিচার করতে পারে নাই। এবার আমরা চাইবো বর্তমান সরকার শ্রমিক হত্যার বিচার করবে।’
অগ্নিদুর্ঘটনার এক যুগেও ক্ষতিপূরণ ও বিচার না পাওয়ার জন্য সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের অবহেলাকে দুষছেন ভুক্তভোগীরা। এমন দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কর্মস্থলে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার দাবি তাদের।