মানুষকে মিথ্যা বলে প্রতারণা করবেন না— জামায়াতের প্রতি মির্জা ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর | ছবি: এখন টিভি
0

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জামায়াতে ইসলামীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের বন্ধু মানুষ তাহের সাহেব— আমাদের দোষারোপ করেছেন যে, আমরা নাকি নির্বাচনকে বাধা দেবো। মানুষকে মিথ্যা কথা বলে প্রতারণা করবেন না।’ আজ (শনিবার, ১ নভেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে না, তারা আপত্তি দেবে সেটাকে বলা হয় নোট অব ডিসেন্ট। সে নোট অব ডিসেন্ট লিপিবদ্ধ করা হবে এবং সেটা এখানে (জুলাই সনদে) লেখা হবে। লেখা হয়েছে, সেটাতে আমরা সই করেছি। আর এখন উনারা যেটা উত্থাপন করলেন প্রধান উপদেষ্টার কাছে, সেখানে ওই নোট অব ডিসেন্টের কোনো কথাই নাই। আবার নতুন করে কিছু বিষয় ওখানে নিয়ে আসছে। এটা অন্যায়, এটা জনগণের সঙ্গে নিঃসন্দেহে একটা প্রতারণার মতো কাজ।’

তিনি বলেন, ‘তারপরও একটা দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা প্রেস কনফারেন্স করে বলেছি। আমরা রাস্তায় যাইনি, আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কোনো প্রতিবাদ করিনি। আমরা প্রধান উপদেষ্টার বাড়িও ঘেরাও করিনি বা আমরা নির্বাচন কমিশনও ঘেরাও করিনি। একটি রাজনৈতিক দল, তারা জোট বানিয়ে সেটা করছে। তারা বিভিন্নভাবে এ সরকারকে বাধ্য করতে চায় যে, তাদের কথাটাই শুনতে হবে। আমাদের কথা খুব পরিষ্কার। আমরা যেটা সই করেছি, আমরা অবশ্যই সেটার দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করবো। কিন্তু যেটা আমরা সই করিনি, সেটার দায়-দায়িত্ব আমরা গ্রহণ করবো না। আমরা চাই যে এ বিষয়গুলো একটু আলোচনার মাধ্যমে সমাধান নেয়া হোক। নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছেন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, তখনই নির্বাচন হতে হবে। পিআর হবে কি হবে না, সেটা আগামী সংসদ সিদ্ধান্ত নেবে।’

গণভোটের বিষয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘গণভোটের কথা বলেছে, আমরা রাজি হয়েছি, ঠিক আছে। প্রয়োজন ছিল না। গণভোটের কোনো প্রয়োজন ছিল না। তারপরও রাজি হয়েছি যে, ঠিক আছে। আমরা বলেছি, নির্বাচনের দিনই গণভোট করতে হবে। কারণ আলাদাভাবে গণভোট করতে হলে আরও খরচ বেড়ে যাবে প্রায় হাজার কোটি টাকার ওপরে। নির্বাচনের দিন দুটি ব্যালট থাকবে। একটি ব্যালটে গণভোটের কথা থাকবে, আরেকটি ব্যালটে সংসদের নির্বাচন হবে। এটা তো অত্যন্ত সুন্দর কথা। এটা না করে এখন আবার তারা গণভোট আগে হতে হবে, তারপর নির্বাচন হবে। এটা তো আপনারাই বলছেন।’

আরও পড়ুন:

জামায়াতের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা তো নির্বাচন পেছানোর কথা একবারও বলিনি। আমরা বারবার বলছি যে, নির্বাচন অতিদ্রুত করতে হবে। মানুষকে মিথ্যা কথা বলে প্রতারণা করবেন না। আমি আজ কাগজে দেখলাম, আমাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় বন্ধু মানুষ তাহের সাহেব— আমাদের দোষারোপ করেছেন যে, আমরা নাকি নির্বাচনকে বাধা দেবো। এখন পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে যত বাধা সৃষ্টি করেছেন, আপনারা করেছেন। আপনারা পিআরের দাবি নিয়ে এসেছেন, আলোচনায় ছিল না, প্রস্তাবেও ছিল না। জোট পাকিয়ে রাস্তার মধ্যে আন্দোলন করছেন এবং ধমক দিচ্ছেন আজকেই হতে হবে, না হলে আমরা নির্বাচন হতে দেবো না। এটা তো মানুষকে বোকা বানানো।’

জাতি যেকোনো হামলা প্রতিরোধ করতে প্রস্তুত আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত কঠিন একটা সময় পার করছি। এসময়টা আমাদের জন্য একটা পরীক্ষা। এখানে কতটা ধৈর্য ধরে আমরা এ সময়টা পার করতে পারি, এ নির্বাচনটা করতে পারি। এখানে বিভিন্ন শক্তি— প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলছেন, যেকোনো সময় হামলা হতে পারে। পরিষ্কার করে বলা উচিত ছিল, হামলা কোথায় থেকে আসবে? কারা করবে? বলা উচিত ছিল জাতিকে। জাতি প্রস্তুত আছে যেকোনো হামলা প্রতিরোধ করতে। হামলার ভয় দেখিয়ে এ দেশের মানুষকে কখনও পরাজিত করা যায় না। খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, এ দেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়, গণতান্ত্রিক একটা ব্যবস্থা চায়।’

শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর জন্য ভারত সরকারকে আহ্বান করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে ভারতে বসে হাসিনা বিভিন্ন মিডিয়াকে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন। একবারের জন্যও তিনি অনুশোচনা পর্যন্ত প্রকাশ করেনি। তাকে সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করেছিল, তুমি কি অ্যাপোলজি চাইবে, মাফ চাইবে এর জন্য? সে বলেছে, না কোনো অ্যাপোলজি চাইবো না। সেই মহিলা, সেই ব্যক্তি আজকে অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারতে বসে। ভারত সরকারকে খুব পরিষ্কার করে আমরা বলতে চাই, হাসিনাকে আপনারা বাংলাদেশে ফেরত দিন। বাংলাদেশের আইনে যে বিচারের মুখোমুখি তাকে হতে হবে, সে বিচারের মুখোমুখি করার ব্যবস্থা করে দিন। সবসময় বাংলাদেশের বিরোধিতা করবেন না। মানুষের বিরোধিতা করবেন না, বাংলাদেশের মানুষ সেটা মেনে নেবে না।’

এসএস