রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির উত্থান চায় তরুণ নেতৃত্বের দলগুলো, সম্ভাবনা কতটা?

সারজিস আলম, জোনায়েদ সাকি, রাশেদ খান
সারজিস আলম, জোনায়েদ সাকি, রাশেদ খান | ছবি: এখন টিভি
1

বিএনপি-জামায়াতের বাইরে, রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির উত্থান ঘটাতে চায় এনসিপি, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পার্টি, এবি পার্টিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। অপেক্ষাকৃত তারুণ্যনির্ভর এসব দলের শীর্ষ নেতারা দাবি করেছেন, তাদের জোট হবে মধ্যমপন্থার। তবে, বাংলাদেশে এরইমধ্যে মধ্যমধারার রাজনীতি চর্চা আছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

মধ্যমপন্থার রাজনীতির প্রতিশ্রুতি নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করে, চব্বিশের অভ্যুত্থানের সংগঠকদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। রাষ্ট্রে বিদ্যমান জাতিগত, সামাজিক, লিঙ্গীয়, ধর্মীয় আর সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও বৈচিত্র্য রক্ষার মাধ্যমে এ মধ্যমপন্থার সূচনা করতে চায় বলে জানিয়েছিলেন তারা।

একই ধ্যানধারণায় বিশ্বাস রাখে, এমন দলগুলোর সঙ্গে জোটভুক্ত হওয়া যায় কি না, সে লক্ষ্যে সম্প্রতি দলের ভেতর-বাইরে জোর আলোচনা চলছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা যারা একই আদর্শভিত্তিক বাংলাদেশপন্থার রাজনীতি করছি; আমাদের জায়গা থেকে একসঙ্গে একটি যদি মুভ হয়, তাহলে এটি জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করবে। আমরা সেই জায়গায় কাজ করছি। এটি এখন ইলেক্ট্রলার অ্যালাইন্সে যাবে, না অন্য কোনো ফরম্যাটে যাবে, নাকি ইউনাইটেড হওয়া দিকে যাবে—এটি সামনের নির্বাচনের ইকুয়েশন বা সিচুয়েশন নির্ধারণ করে দেবে। নির্বাচনে নিজেদের শক্তি আলাদা আলাদা প্রদর্শনের চেয়ে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে, ভালো একটি ফল পেতে পারি।’

গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে রুদ্ধদার বৈঠকে অংশ নেন সমমনা দলগুলোর নেতারা। এনসিপি ছাড়াও সেই বৈঠকে অংশ নেয় গণ-সংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পার্টি , এবি পার্টিসহ গণতন্ত্র মঞ্চের আওতাভুক্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। জানা গেছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ৩য় শক্তির আবির্ভাবের ব্যাপারে ‘এক ছাতার নীচে’ আসার ব্যাপারে ইতিবাচক তারা।

আরও পড়ুন:

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা একটি জনগণের স্বার্থের জোট গঠন করতে চাই। যেটি জনগণের পক্ষে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, একটি গণতান্ত্রিক অর্থনীতিক সামাজিক কর্মসূচি থাকবে; যেখানে মানুষের অধিকার ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা হবে।’

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের পরে একটি মধ্যপন্থার রাজনীতির সংকট হয়েছে। একদিকে বিএনপি, অন্যদিকে আমরা দেখতে পাচ্ছি ইসলামিকদের একটি উত্থানের কথা বলছে। আওয়ামী লীগের এ শূন্যতা যেন নতুন এটি শক্তির দ্বারা পূরণ হয়। কারণ রাজনীতিতে শূন্যতা কখনো ভালো ফল বয়ে আনবে না।’

অবশ্য মধ্যমপন্থার রাজনীতি বলতে এ দলগুলো যেসব সূচনা করতে চান, বিএনপি দীর্ঘদিন সেই ধারার রাজনীতি করে আসার দাবি করে আসছে। এমনকি জামায়াতে ইসলামীর সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও অনেকটা মধ্যমপন্থার আঁচ পাওয়া যায়।

সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম অধ্যাপক শামীম রেজা এখন টিভিকে বলেন, বিএনপি-জামায়াতের বাইরে, মধ্যমপন্থার নামে নতুন জোটের উত্থান কতটুকু সফল হবে, তা পরিষ্কার হবে শেষ পর্যন্ত এসব দলগুলোর কর্মসূচি ও ইস্যুভিত্তিক বার্তা থেকে।’

তিনি বলেন, ‘তাদের যে সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা, বিরাট একটি তরুণ জনগোষ্ঠীর মনোভঙ্গি বুঝতে পারার ক্ষমতা; আমি মনে করি এটি তাদের বড় শক্তি। এখন তারা তাদের আদর্শিক ব্যাপারে দলীয় কর্মসূচির ব্যাপারে কতটা একমত, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।’

মধ্যমপন্থার আদর্শ দলগুলোর নেতারা কতটুকু ধারণ করছেন, সেটাও জোটের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলেও বলে মত দিয়েছেন এ অধ্যাপক।

এফএস