নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের এমন অবস্থানে শঙ্কা জাগে দেশের গণতান্ত্রিক যাত্রা ব্যাহত হওয়ার, প্রশ্ন উঠতে থাকে ছাত্রজনতার রক্ত মারানো অর্জিত বিপ্লব ভেস্তে যাবার। রাজনীতির এমন জটিল সময়ে গতকাল (শুক্রবার, ১৩ জুন) দিনভর চোখ ছিল লন্ডনের দ্য ডরচেস্টারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠকের দিকে।
প্রায় দেড় ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর দুপক্ষই জানায় বৈঠক ফলপ্রসূর খবর। সরকার ও বিএনপির নির্বাচন নিয়ে অবস্থানের শিথিলতাই কি বৈঠকে সফল বলা হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন জানান, দুই নেতার নির্বাচন,সংস্কার, বিচারসহ নানা ইস্যুতে ঘনিষ্ঠ আলোচনা হওয়ার ফলে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কাটার জন্যই বৈঠককে ফলপ্রসূ বলছেন তারা।
মাহদী আমিন বলেন, ‘এ ধরনের একটা বৈঠকের পরে যে সৌহার্দ্য, যে আন্তরিকতা আমরা দেখেছি তাতে অবশ্যই অনিশ্চয়তার যে কালো মেঘ, সেটা কেটে গিয়েছে। আমরা সেই বাংলাদেশ চাই, যেখানে আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমাদের সংস্কার, বিচারসহ প্রতিটি বিষয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে আকাঙ্ক্ষা ছিল আমরা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হবো, আমরা আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছ থেকে প্রাপ্য মর্যাদা পাবো।’
বিএনপি লন্ডনের বৈঠককে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কাটার ক্ষণ বললেও ছাত্রদের নতুন দল এনসিপি একে স্বাগত যেমন জানাচ্ছে তেমনি দলটির শঙ্কা সরকারকে জিম্মি করে দাবি আদায়ে তৈরি হতে পারে নতুন সংকট।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘একটা দল দেশের জাতীয় এজেন্ডাকে জিম্মি করে রাখছে। সেখানে সরকারের কাছ থেকে তাদের দলীয় একটা দাবিকে আদায় করে নিচ্ছে। এটাকে যদি বলা হয় জাতির কালো মেঘ দূর হয়েছে, সেটাতে আমরা একমত হবো না। উল্টো নতুন করে আরও অনেকগুলো শঙ্কা তৈরি হতে পারে।’
এবি পার্টি কিংবা গণসংহতির মতো দলের নেতারাও বৈঠককে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। আলোচনায় রাজনৈতিক ভেদ কমার পাশাপাশি লন্ডনের বৈঠক নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অন্যান্য দলগুলো সাথে আলোচনা করবে বলেও প্রত্যাশা তাদের।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আশা করি প্রধান উপদেষ্টা আবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনায় বসবেন। আমরা ঐকমত্য কমিশনে বসবো। এর মধ্য দিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে সামনের গতিবিধিও উপলব্ধি করতে পারবো।’
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু বলেন, ‘বৈঠকটি খুবই ইতিবাচক। আমরা মনে করি যে এই বৈঠকের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে একটা নতুন আশাবাদ জাগ্রত হবে এবং যেসমস্ত বিভেদ বিশৃঙ্খলা ছিল সেগুলো কিছুটা কমে আসবে।’
বৈঠক নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান মনে করেন, নির্বাচনের তারিখ ঘিরেই তৈরি হয় মূল সংকট। ডেটলক খুলে যাওয়ায় সংকট কেটেছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী মনে করছেন রাজনৈতিক দলগুলোর নানামুখী অবস্থানের কারণে সংকট এখনও কাটেনি।
মারুফ কামাল খান বলেন, ‘এই যে ডেটলক ছোটা এবং সেখান থেকে আবার সুসম্পর্ক তৈরি করা যেটা আগের সম্পর্কে চলে যাওয়া সেটা জরুরি ছিল। এটার মাধ্যমে কিন্তু অন্যান্য যেসমস্ত জট আছে সেখানে অনেক দূর নিষ্পত্তি হয়েছে।’
ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনের যে তারিখের কথা ড. ইউনূস বলেছেন ওইটা কনডিশনাল। উনি বলেছেন সংস্কার এবং বিচারকার্য শেষ হলে তারপর নির্বাচন দিবেন। সেখান থেকে উনি কিছুটা নমনীয় হয়েছেন কিন্তু এই দুটিকে ত্বরান্বিত করে বিএনপি এবং অন্যান্য দলরা যদি দ্রুত নির্বাচন চায়, তারা ড. ইউনূসকে সাহায্য করে এই দুটিকে ত্বরান্বিত করে নির্বাচন হলে তখন বাংলাদেশের সংকট কাটবে। তার আগে নয়।’
রাজনৈতিক দলগুলো মৌলিক সংস্কারে ঐকমত্য পোষণ ও বাস্তবায়নে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলেই কেবল নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব হবে।





