বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী শ্রাবণ থেকে অগ্রহায়ণ আমনের মৌসুম। বীজতলা তৈরি ও চারা রোপণের সময় বর্ষাকালে পড়ায় এ আবাদ অনেকটা বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু আশানুরূপ বৃষ্টি না হওয়ায় আমনের খেত ফেটে চৌচির। জমি শুষ্ক হয়ে পড়ায় এবার যশোরের চাষিদের পুরোটাই নির্ভর করতে হচ্ছে সেচের ওপর।
এতে একদিকে যেমন উৎপাদন খরচ বাড়ছে তেমনি ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা জেলার কৃষকদের। এছাড়া সার, কীটনাশকসহ চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণের খরচ বৃদ্ধি নিয়েও দুশ্চিন্তায় তারা।
কৃষক বলেন, আমন ধানের জন্য বৃষ্টি দরকার হয়। পর্যাপ্ত পানি না হইলে ফলন পাওয়া যায় না। সেলো মেশিন দিয়া পানি দিলে ১ ঘণ্টা পরেই আর জমি শুকাইয়া যায়। আমনের গোড়ায় সব সময় পানি থাকা দরকার। তেলের দাম বাড়াতে পাওয়ার টিলারে বিঘাপ্রতি খরচ বাড়তি। আবার সারের টাকাও বেশি।
যশোর জেলাতে কৃষি জমিতে সেচের জন্য বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত মিলিয়ে এক লাখ ৬৫ হাজার ৬৬৭টি সেচ পাম্প আছে। খরা মোকাবিলায় যার প্রায় সবগুলোই এখন সচল। বৃষ্টি না হওয়ায় এসব সেচপাম্পের মাধ্যমে এক বিঘা জমিতে পানি দিতে কমপক্ষে দুই হাজার টাকা বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে।
ফলে চলতি আমনের মৌসুমে ১০ লাখ ৩৯ হাজার ৭২০ বিঘা জমিতে সেচ বাবদ কৃষকদের অতিরিক্ত খরচ হবে প্রায় ২০৮ কোটি টাকা।
প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছে কৃষি বিভাগ। পানির ঘাটতি মেটাতে সম্পূরক সেচের পরামর্শ দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সুশান্ত তরফদার।
তিনি বলেন, 'সেচ ব্যবস্থাপনায় আমরা প্রতিনিয়ত কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে কৃষক আমন আবাদে লাভবান হবে।'
আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, গত বছর যশোর অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিলো ৯০৩ মিলিমিটার। আর এবছর জুলাই মাস পর্যন্ত ৬৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। গাছপালা নিধনের পাশাপাশি নদী-নালা, খাল-বিল ভরাটসহ নানা কারণে জলবায়ুতে এমন বিরূপ প্রভাব।
চলতি মৌসুমে যশোর জেলায় ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১০ থেকে ১৫ ভাগ জমিতে ধানের চারা লাগানো শেষ হয়েছে।