নাটোর সদর উপজেলার গোয়ালদীঘি গ্রামের কৃষক রূপচান মিয়ার জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে ফসল উৎপাদনের কাজে। বাপ-দাদার দেখানো পদ্ধতিতে কৃষি জমিতে ফসল ফলিয়ে এলেও গেলো কয়েক বছরে বিরূপ আবহাওয়ায় খাপ খাইয়ে ফসল উৎপাদনে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তার।
রূপচান মিয়া বলেন, 'খুব কষ্ট হচ্ছে, আগের মতো ফসল করাও যাচ্ছে না। সেচের অভাবে কোনো ফসল করা যাচ্ছে না। বৃষ্টি না থাকায় পাটও ভালো হচ্ছে না।'
যে মাটিতে সোনা ফলে, আজ সে মাটিই পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়েছে। আকাশে মেঘমালার বিচরণ থাকলেও কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির দেখা নেই এই জনপদে। তাইতো আষাঢ়ের মাঝামাঝিতেও রোপা আমনের বীজতলা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে চাষিদের। বৃষ্টি নির্ভর রোপা আমন ধান চাষ করতে হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির সেচ দিয়ে। এতে বাড়ছে কৃষকের খরচ।
একজন কৃষক বলেন, 'খরার কারণে আবাদ করা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। মেশিনেও ঠিকমতো পানি পাই না। বর্ষায় যে ধান হয়, পানির অভাবে সে ধান করতেও নামতে পারছি না।'
কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, যে কোন ফসল উৎপাদনের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হতে হবে অন্তত ৩০ ডিগ্রি। কিন্তু গত কয়েক বছর তাপমাত্রার পারদ উঠা নামা করেছে ৩৫ থেকে ৪২ ডিগ্রি পর্যন্ত। এতে ঘটছে ফলন বিপর্যয়। গত দশ বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ২০১৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গড় বৃষ্টিপাত কমেছে ১৪৫ মিলিমিটার।
নাটোরের কৃষি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কল্যাণ প্রসাদ পাল বলেন, 'কৃষি এবং কৃষকের উন্নয়নের জন্য এখানে কম পানি লাগে, এমন ফসলের জাত মাঠে অবমুক্ত করা গেলে কৃষকরা উপকুত হবে।'
তাপমাত্রা বৃদ্ধি একদিকে যেমন কৃষকদের ফসল উৎপাদনে ভাবাচ্ছে, তেমনি দৈনন্দিন জীবনেও এর প্রভাব ফেলছে। আবহাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে ফসল উৎপাদনে যেমন বাড়তি খরচ গুণতে হচ্ছে, তেমনি কাঙ্ক্ষিত ফসল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষক। তাই উত্তরের কৃষি বাঁচাতে গবেষণার পাশাপাশি বদলে যাওয়া পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারে এমন ফসলের জাত উদ্ভাবনের তাগিদ সংশ্লিষ্টদের।