কৃষি , গ্রামীণ কৃষি
দেশে এখন
ধান-চাল উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে নওগাঁ
ধান ও চাল উৎপাদনে দেশের তৃতীয় স্থানে থাকা জেলা নওগাঁ। যা মূল কারিগর সেখানকার কৃষক। এখানকার উৎপাদিত খাদ্যশস্য স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ৪২ শতাংশ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে। যাতে বাণিজ্য হয় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।

নওগাঁর মাঠজোড়া ফসলের সমারোহ চোখ জুড়ানো দৃশ্য ছাড়াও জানান দেয় নেপথ্য কারিগরদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার বার্তা। এরই ফল হিসেবে, খাদ্যশস্য উৎপাদনে দেশের তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে জেলাটি। শুধু খাদ্যে স্বয়ংস্পূর্ণতাই নয়, অর্থনৈতিক বিবেচনাতেও যা ইতিবাচক বলে মনে করেন কৃষি কর্মকর্তারা।

গত ১৫ বছর আগেও যেসব ধানের আবাদ হতো তার বদলে আবাদ হচ্ছে উন্নত জাতের ধান। যাতে বেড়েছে ফলন। লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।

মোটা, মাঝারি মোটা ও চিকন এই তিন ধরনের ধানের আবাদ সব থেকে বেশি হয় এখানে। তবে স্বর্ণা-৫, হাইব্রিড, পারিজা, কাটারি, রনজিত, পাইজাম, জিরাশাইল, গোল্ডেন আতপ, চিনিআতপ এবং কালোজিরাসহ অন্তত ৪০ প্রকার ধান চাষ হয়।

চাষিরা বলেন, আগের ধান চাষ বাদ দিয়ে এখনকার উন্নতমানের বীজের ফলন চাষ করতেছি। আগে ধান হতো ১২-১৪ মণ। আর এখন হয় ২২-২৩ মণ। ধান আমরা নিজেরাও খাই আবার বিক্রিও করি।

কৃষকের পরিশ্রমে উৎপাদিত ধান তিন হাত ঘুরে চলে যায় চালকলে। এরপর ধান থেকে চাল উৎপাদন করে মোকাম ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের হাত ধরে পৌঁছে যায় ভোক্তাদের কাছে। এ প্রক্রিয়ায় জড়িত আছেন স্থানীয় কৃষক, পাইকার, পরিবহন-শ্রমিক ও ব্যবসায়ীসহ লক্ষাধিক মানুষ।

জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, 'আমরা সরাসরি হাট থেকে ধান কিনতে পারি না, অনেক লোকবল লাগে। আড়ৎদারদের একটা কমিশন দিয়ে ধান মিলে নিয়ে আসি। তারপর চাল উৎপাদন করার পর প্যাকেট করে বিক্রি করি।'

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ২ লাখ ৬৪ হাজার ২০০ হেক্টর। এরমধ্যে প্রায় ১ লাখ ৯৬ হাজার হেক্টর জমিতে হয় ধানের আবাদ। তিন মৌসুমে বোরো, আউশ ও আমন ধানের আবাদ হয়। এ তিন মৌসুমে জমির পরিমাণ প্রায় ৪ লাখ ৪৪ হাজার ১১০ হেক্টর।

যা থেকে বছরে প্রায় ১৬ লাখ ৫৬ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়। এর বিপরীতে জেলায় চাহিদা ৪ লাখ ৪৯ হাজার টন। বাকি ১০ লাখ ৭০ হাজার টন সরবরাহ করা হয় বিভিন্ন জেলায়। যার বাজারমূল্য প্রায় ৫ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'নওগাঁ জেলার চাল ইতিমধ্যে সারাদেশে ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আগামীতে আমাদের উৎপাদনের ধারা অব্যাহত থাকবে। আমরা কৃষকের পাশে আছি।'

জেলায় বছরে মোটা ধান উৎপাদন হয় ২৯ শতাংশ। চাহিদা মেটাতে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, নেত্রকোণা ও ময়মনসিংহ জেলা থেকে সরবরাহ হয় বাকি ধান। মূলত সরকারি গুদামে দেয়ার জন্য মিল মালিকরাই এ ধরনের ধান-চাল সংগ্রহ করেন।

এভিএস