কৃষি , গ্রামীণ কৃষি
দেশে এখন
0

নেত্রকোণার হাওরে ধানের বাম্পার ফলন

নেত্রকোণার হাওরে লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ ধান উৎপাদন হয়েছে। আবহাওয়া চাষের উপযোগী হওয়ায় এবারে প্রতি কাঠা জমিতে ধান মিলছে ৮ থেকে ১০ মণ। কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনসহ আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়ায় সহজেই উৎপাদিত ধান ঘরে তুলতে পারছেন কৃষকরা। এরইমধ্যে এসব ধান মহাজনদের কাছে বিক্রি করছেন তারা।

চলতি বছর আগাম বন্যা কিংবা প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগের মুখোমুখি হয়নি হাওরাঞ্চল। যা কৃষকের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। নেত্রকোণার মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরীসহ সবকয়টি উপজেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। হাসিমুখে ফসল ঘরে তুলতে তোড়জোড় শুরু হয়েছে কৃষকদের।

প্রায় চার মাস সার, বীজ, সেচ দিয়ে পরিচর্যা শেষে বেড়ে ওঠা ফসল মূলত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে কাটতে শুরু করেছেন চাষীরা। আর এই ধান ঘরে তুলতে দূর-দুরান্ত থেকে হাওরে এসেছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। তবে রোদের যে প্রখরতা তাতে কাজ করতে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের।

এদেরই একজন আকরাম সরদার। পাবনা থেকে এসে গত ২০ বছর ধরে হাওরে ধান কাটছেন তিনি। গেলো কয়েক বছরের তুলনায় এবার ফসল ভালো হওয়ায় বাড়তি কিছু টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

আকরাম সরদার বলেন, 'এ এলাকায় আসছি কাজ করার জন্য। যেন কিছু টাকা ইনকাম করতে পারি। এখানে আসলে এনাদের যেমন ধান কেটে নিয়ে উপকার হয়। তেমনি আমারও উপকার হয় ধান কেটে কিছু টাকা পাই। এখানে ধান কাটা শেষ করে বাড়িতে গিয়ে নিজেদের কাটামারি করবো।'

আকরাম সরদারের মতোই অনেকেই এসেছেন ধান কাটতে। হাওরে ২০ থেকে ২৫ দিনে কাজ করে একেকজন পাবেন ২০ থেকে ২৫ মণ ধান। তবে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনসহ আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহারে সহজেই উৎপাদিত ধান ঘরে তুলতে কৃষকরা।

একজন কৃষক বলেন, 'মালিকরা তো লাভবান হচ্ছেই। আমরা তো আশা করে আসি যে ১৫ থেকে ২০ মণ ধান কেটে নিয়ে যাব। ৭দিনে এই ২০ মণ ধান হলে আমার চলে যাবে।'

হাওরের জমিগুলোতে স্বল্পকালীন জাত হিসেবে ব্রি-ধান ২৮, ৮৮ ও ২৯ এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। তবে গেল কয়েকবছর ধরে রোগবালাইয়ের প্রকোপ, প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগে ফসল হানি হওয়ায় স্বল্পকালীন এসব ধানের পরিবর্তে হাইব্রিড নানা জাতের ধানের আবাদ করেছেন স্থানীয় চাষীরা। এতে এক কাঠা জমি থেকে এবছর ধান মিলেছে ৮ থেকে ১০ মণ পর্যন্ত। এরইমধ্যে সংগ্রহ করা সেসব ধান মহাজনদের কাছে বিক্রি করতে শুরু করেছেন চাষীরা। হাইব্রিড মোটা ধান বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। আর চিকন ধান বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায়।

কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি বছর জেলার দশটি উপজেলায় ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যেখান থেকে উৎপাদিত ধান থেকে পাওয়া যাবে ৮ লাখ ২ হাজার ৪৪৫ টন চাল। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর শুধুমাত্র হাওরাঞ্চলে যে ধান উৎপাদন হবে তার বাজারমূল্যে ৭৫০ কোটি টাকা। তবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় দ্বিগুণ ধান উৎপাদন হবে বলছে কৃষি কর্মকর্তারা।

নেত্রকোনা মদন উপজেলার কৃষি অফিসার হাবিবুর রহমান বলেন, '৯২, বীণা ধান-২৫, বীণা ধান-২৪ ধানগুলো আসছে। এ ধানগুলোর ফলন কাটাতে হিসাব করলে ২০ থেকে ৪০ কেজি বেশি। এ ধানে রোগের আক্রমণও কম হয়। এ ধানগুলো চাস করলে কৃষকরা লাভবান হবে।'

গেল বছর এই জেলায় ১ লাখ ৮৪ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়। এখান থেকে পাওয়া ৭ লাখ ৭৬ হাজার ৭৭৫ টন চালের বাজারমূল্যে ছিল ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

এসএস