কৃষি , গ্রামীণ কৃষি
দেশে এখন
0

সাতবার ভাঙলো রংপুর সেচ প্রকল্পের পাড়

এক দশকে রংপুর সেচ প্রকল্পের একই জায়গায় সাতবার ভাঙলেও স্থায়ী মেরামতে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এবার শুষ্ক মৌসুমে পানির চাপে ৩৫ ফুট পাড় ভেঙে নষ্ট অন্তত ২০০ একর জমির ফসল।

যে সেচ প্রকল্পের পানি দিয়ে কৃষকের লাভবান হওয়ার কথা সে পানির প্লাবণেই বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচ ক্যানেলের আকস্মিক ভাঙনের পর হু হু করে প্রায় ২০০ একর মাঠ জুড়ে পানি ঢুকে যায়। আলুসহ বোরোর খেত তলিয়ে গেছে।

পানির তোপে কয়েক একর কৃষিজমি জলাশয়ে রূপ নেয়। শুধু তাই নয়, পানির সঙ্গে বালুর স্রোতে কৃষিজমি বালুতে ভরে যায়। এতে ফসল নষ্ট হয়েছে আবার জমি উর্বরতাও হারিয়েছে। বিনিয়োগ আর বাড়ন্ত ফসল হারিয়ে শত শত কৃষকের মাথায় হাত।

কৃষকরা বলেন, 'জমির অবস্থা শেষ হইয়া গেছে। বউ পোলাপান ক্যামনে আমরা পালবো। এত ক্ষতি কী সহ্য হয়! আলু, ধান-চাল সব ধ্বংস হইয়া গেলো।'

আকস্মিক ভাঙনে পানি ঢুকে নষ্ট হয়ে যাওয়া কৃষকের কষ্টের ফসল

স্থানীয়রা বলছেন, সেচ প্রকল্পের রংপুর সদর উপজেলার অংশের ৩৫ ফুট চওড়া পাড়ের নিচে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ক্যানেলের নিচে ছিদ্র হয়ে পানি খারুবাজ নদীতে চলে যায়। কিন্তু সে পানি নিষ্কাশনের জন্য ক্যানেলের পাড় ব্যতীত পাউবোর নিজস্ব কোন ব্যবস্থা নেই। গেলো বছর একই স্থানে ভাঙনের পর পাউবো’র স্থায়ী বাঁধ দেয়ার প্রতিশ্রুতিও বাস্তবায়ন হয়নি। খেসারত হিসেবে এবার অন্তত ২ কোটি টাকার ক্ষতির শঙ্কা স্থানীয় কৃষিজীবীদের। তারা বলেন, 'পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিম্ন কর্মকর্তারা কাজের বরাদ্দের পরিবর্তন করে দুর্বলভাবে কাজ করেছে, যার জন্য নয় বছরে নয় বার ভাঙলো। এখন তাদেরকে এসে কৃষকদের সাথে কথাবার্তা বলতে হবে। অবশ্যই চাষিদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।'

নিলফামারীর তিস্তা ব্যারেজ থেকে শুরু করে রংপুর হয়ে এই সেচ প্রকল্পের খালের বিস্তৃতি দিনাজপুর পর্যন্ত। যখন কৃষিজমিতে সেচ সুবিধার স্বার্থে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকায় এ প্রকল্পের সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে। তখন এই সেচ প্রকল্পে ভাঙন হয়েছে।

তবে দৃশ্যপটে না আসলেই বরাবরের মতো এবারও স্থায়ী সমাধানের প্রকল্প নেয়ার আশ্বাস দিয়েই দায় সারলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম। বলেন (মুঠোফোনে), 'আপাতত ঠিকাদারদের ডেকে সেচ দেয়ার জন্য কাজটি শেষ করবো। আর স্থায়ী সমাধানের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিবো।'

এদিকে ৭৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সেচ খালের পাড়ে টেকসই ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণসহ এবার ক্ষতিপূরণের দাবিতে একজোট ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। তাদের ভাষ্য, ক্ষতিপূরণ না মিললে এবার ভাঙা পাড় সংস্কার করতে তারা দেবেন না।