বসন্তের দহনকাল শেষে রুদ্র বৈশাখের আগমনী সুর। বিচিত্র বৃক্ষরাজির ফুলেল সম্ভারে ভরে ওঠা প্রকৃতি জানান দেয়, দুয়ারে নতুন বছরের হাতছানি।
জীর্ণ-পুরনোকে পেছনে ফেলে স্বপ্নময় নতুনের সূচনা হয় নববর্ষে। তাকে বরণে উৎসবের আমেজ চারপাশে। মঙ্গল শোভাযাত্রার আঁতুড়ঘর খ্যাত চারুকলাও ধীরে ধীরে সেজে উঠছে বর্ণিল রঙে।
ঈদের ছুটিতে সুনসান ক্যাম্পাস, তবে থেমে নেই চারুকলার কর্মযজ্ঞ। নববর্ষ উদযাপনে চলছে পুরোদমে প্রস্তুতি। মঙ্গল শোভাযাত্রার মোটিফ তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা।
'নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান' স্লোগানকে ধারণ করে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় স্থান পাবে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি। থাকবে জাতীয় মাছ ইলিশ আর শান্তির প্রতীক কবুতর। এছাড়া লোকশিল্পের নিদর্শনস্বরুপ কাঠের বাঘও স্থান পাবে শোভাযাত্রায়।
শোভাযাত্রার মোটিফগুলো একদিকে যেমন আকৃতি পাচ্ছে অন্যদিকে চলছে রঙ তুলির আঁকিবুঁকি। কাগজের মুখোশ, ফুল-পাখি আর মাটির সরায় রঙের ছোঁয়া দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, বৈশাখ শিক্ষার্থীদের মেলবন্ধনে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। তবে ঈদের ছুটিতে উপস্থিতি কম থাকলেও সময়মতই শেষ হবে সব প্রস্তুতি।
ছুটির আবহে অনেককেই দেখা যায় বর্ষবরণের প্রস্তুতি দেখতে এসেছেন চারুকলায়। তারা বলছেন, প্রাণের এই উৎসব ছুঁয়ে যাবে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে।
চারুকলা অনুষদ বলছে, নতুন বাস্তবতায় এ বছর ভিন্ন বৈচিত্র্যে সাজবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। যেখানে স্থান পাবে সব ধর্ম-বর্ণ আর জাতিসত্তার ঐতিহ্য। সব বিতর্ক পেছনে ফেলে অতীতের রীতি ও পরম্পরা মেনেই সম্পন্ন হবে শোভাযাত্রা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন ড. আজহারুল ইসলাম শেখ বলেন, ‘একটা অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আমরা আলোর দিকে আসতে পেরেছি। সমকালীন যে চেতনা মানে ২৪ গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী যে স্পিরিট সে জিনিসগুলোকেও আমাদের চিন্তা করতে হচ্ছে। সে হিসেবে আমি মনে করছি এ বছর একটু ব্যতিক্রমী ও ইনক্লুসিভ হবে।’
তিনি বলেন, ‘ভিন্ন যেটি হচ্ছে এবার বিভিন্ন উপজাতি মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেবে। তারা যুক্ত হলে স্বাভাবিকভাবেই ব্যতিক্রম হয়ে উঠবে।’
প্রতিবারের মত পহেলা বৈশাখে সকাল ৯টায় মঙ্গল শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে বের হয়ে শিশু পার্ক ও টিএসসি ঘুরে আবারও চারুকলায় এসে শেষ হবে।