চিকিৎসার পাশাপাশি তথ্য দিয়েও সহায়তা করে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার

দেশে এখন
0

ধর্ষণের শিকার নারীদের চিকিৎসা দেয়া হয় সব ধরনের গোপনীয়তা রক্ষা করে। ধর্ষককে বিচারের আওতায় আনতে আলামত ও তথ্য সংগ্রহ করে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার। তবে ধর্ষণের শিকার নারীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখাকে জরুরি মনে করেন চিকিৎসকরা। ধর্ষণের বিচার দ্রুত করতে ফরেনসিক ও ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট সবচে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রবেশাধিকার নিষেধ। বন্ধ দরজার ওপারে যারা তারা দেখে ফেলেছ এ সমাজের সবচে কদর্য দিক। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার। গোপনীয়তার সঙ্গে চিকিৎসা পান ভুক্তভোগীরা। অনুমতি সাপেক্ষে সুযোগ হয় ওসিসি সেন্টারে প্রাথমিক তথ্য জানার।

ওসিসিতে সোমবার পর্যন্ত ভর্তি আছেন আটজন। তারা সবাই ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আটজনের মধ্যে একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীও আছেন। ওই নারী একজন নিকট আত্মীয় দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এছাড়া বেশিরভাগই শিশু।

গেলো এক বছরে প্রায় ১ হাজারের বেশি ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগী এসেছে ঢাকা মেডিকেলের ওসিসিতে। ওসিসির তথ্য বলছে, নিম্ন আয়ের নারীরা কর্মস্থলে বেশি ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন । অনেকে আবার মামলাও করে না। বাবা দ্বারাও ধর্ষণ হওয়ার ঘটনার অভিজ্ঞতা রয়েছে চিকিৎসকদের।

প্রশ্ন ছিল চিকিৎসার বাইরে ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের ভূমিকা কী? কর্তব্যরত চিকিৎসক জানালেন, ধর্ষণের সব রকম আলামত পুলিশ ও আদালতকে দেয়া হয়। ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়, যার একটি নিজস্ব নম্বর থাকে। এখানকার চিকিৎসকদের সাক্ষ্যও মামলার ক্ষেত্রে জরুরি প্রমাণ।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের সমন্বয়ক ডা. সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমরা এটা খুবই কনফিডেন্সিয়ালি মেইনটেইন করি। এখানে আমি ওসিসি কো-অর্ডিনেটর থাকি। আমাদের মেডিকেল অফিসার থাকে, ফরেনসিকের ডাক্তার থাকেন, সেই সাথে নার্স, পুলিশ কনস্টেবল, সাব-ইনস্পেক্টর। আমাদের প্রত্যেকের উপস্থিতিতে এ পরীক্ষা করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘বাচ্চা মেয়েদের পরীক্ষা করতে বা দেখতে আমাদের কিছুটা কষ্ট হয়। কারণ বাচ্চারা অনেক সময় আমাদের কো-অপারেট করতে চায় না। ইদানিং যেটা হচ্ছে রেপিস্ট বা ধর্ষণকারীর বয়স কমে আসছে। ১৪, ১৬ ১৮ বছরের ছেলে বাচ্চা। যেটা আগে হয়তো ছিল না।’

ধর্ষণের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা রাখে ফরেনসিক রিপোর্ট। ১ হাজারের বেশি ধর্ষণের ঘটনা ফরেনসিক করার অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন এক নারী চিকিৎসক জানান, ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুরা শারীরিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। আতঙ্কে ভোগেন। বিচারের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখাও বড় চ্যালেঞ্জ।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জিনাত ডে লায়লা বলেন, ‘সব বিভাগ বা জেলায় আমাদের ফরেনসিক বিভাগের সার্ভিস নেই। অনেক সময় বিভাগীয় শহরে পাঠানো হয়। সেক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা হয়ে যেতে পারে। যেমন একজন নারীর জন্য যেকোনো ধরনের যৌন নিপীড়ণ পরবর্তী জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। তার মধ্যে ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার ডেভেলপ করতে পারে। পরবর্তীতে অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিজঅর্ডার হতে পারে।’

চিকিৎসকরা জানালেন, শিশুরা নিকট আত্মীয় বা পরিবারের কোনো সদস্য দ্বারা বেশি যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন।

এএইচ