সংস্কার, নির্বাচন ও ড. ইউনূসকে নিয়ে যা বললেন জাতিসংঘ মহাসচিব

.
দেশে এখন
0

ঢাকা সফর নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিবের যৌথ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো আজ (শনিবার, ১৫ মার্চ) সন্ধ্যায়। যদিও সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো নিপীড়ন, বাংলাদেশের মহানুভবতা তাদের সহায়তার অপ্রতুলতা, তাদের প্রত্যাবাসন ও মিয়ানমারের সংঘাত পরিস্থিতির কথা বেশি এসেছে তবুও এখানে অনুপস্থিত ছিল না নির্বাচন, সংস্কার কিংবা ড. ইউনূস প্রসঙ্গ।

জাতিসংঘ মহাসচিব মূলত রমজানের শুভেচ্ছা দিয়ে বক্তব্য শুরু করেন। এরপরই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করেছেন এরপরই এসেছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্ব এবং বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তিনি বলেন, 'ড. ইউনূসের নেতৃত্বে এই দেশটি যে তাৎপর্যপূর্ণ রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং গণমানুষের মধ্যে সুশাসন, সমৃদ্ধি ও ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক বিকাশের একটি আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে আমি সেটাকে স্বীকৃতি ও সম্মান জানাই।'

এসময় বাংলাদেশর ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা কী হওয়া উচিত তা নিয়েও কথা বলেন গুতেরেস। তিনি বলেন, 'এই সময়টা বাংলাদেশের জন্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং একটি অংশগ্রহণমূলক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের এই পথে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও উচিত তাদের প্রত্যাশিত ভূমিকাটা নেওয়া।'

বাংলাদেশের সংস্কার বাস্তবায়নে জাতিসংঘ পাশে আছে এ নিশ্চয়তা দিয়ে আরো বলেন, 'আমি এটুকু নিশ্চিত করতে পারি, বাংলাদেশের সংস্কার ও রূপান্তরের পথে, শান্তি প্রতিষ্ঠা, জাতীয় সংলাপ কিংবা পারস্পরিক আস্থা বিনির্মাণের কাজে জাতিসংঘ সর্বদা সহায়তা দিতে প্রস্তুত।'

অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, '১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন সেটিকে শুধু বাংলাদেশের বিষয় বলে ছেড়ে না দেয়।'

জাতিসংঘ প্রধান, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা না আসায় মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করেন।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলোর উচিত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের জন্য দেশটির সেনা সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা।'

প্রশ্নোত্তরে, মিয়ানমারের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে জানতে চান সাংবাদিকরা।

তিনি বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি, স্যাংশন সম্ভাব্য উপায়ের মধ্যে একটি এবং মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদের অনুমতি প্রয়োজন। কিন্তু এটি যে অসম্ভব তাও না। কিন্তু এটা বরং বেশি প্রয়োজনীয় যে প্রতিবেশিরা মিয়ানমারের যুদ্ধ বন্ধ করতে চাপ প্রয়োগ করছে যাতে সেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।'

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, 'রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থানের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে একমত জাতিসংঘ মহাসচিব।'

তিনি বলেন, 'জাতিসংঘের প্রধান বাংলাদেশকে নিয়ে অপপ্রচার নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছেন।' জুলাই গণহত্যায় অভিযুক্ত শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে কি না, সে বিষয়েও উত্তর দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, 'জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে এ সংক্রান্ত কোন আলোচনা হয়নি। মহাসচিব, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চলমান অপপ্রচারের ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়েছেন। এবং তার এই সফর সেসব অপতথ্য এবং বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টার বিপরীতে একটা উচিত জবাব।'

সংস্কারে জাতিসংঘের সহযোগিতার ব্যাপারে উপদেষ্টা বলেন, 'আমাদের সফল সংস্কার প্রক্রিয়ায় এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণে তার সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি আমাদের সমৃদ্ধ করবে, যেটা বাংলাদেশের মানুষেরও আকাঙ্ক্ষা।'

যৌথ বিবৃতিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বীরত্বপূর্ণ অবদানের কথা স্মরণ করেন ঢাকা সফররত সংস্থাটির মহাসচিব। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক বিকাশ ও জুলাই চার্টার প্রণয়নের জন্য জন্য গঠিত কমিশনসহ, জুলাই আন্দোলনে অবদান রাখা যুবসমাজ ও সুশীল সমাজের সঙ্গেও আলাদা ৩টি বৈঠক করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

ঢাকা সফরের তৃতীয় দিনের ব্যস্ত কর্মসূচি শেষে, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে যখন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দাঁড়ান, তখন ইফতারের কিছু সময় বাকি। বক্তব্য শুরু করেই জাতিসংঘ মহাসচিব রমজানের শুভেচ্ছা জানান।

তিনি জানান, নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও তাদের আশ্রয় দেয়া বাংলাদেশি মুসলিম জনগোষ্ঠীর সঙ্গে একাত্মতা জানাতেই তিনি এই সফরে এসেছেন।

ইএ