প্রকৃতিতে বসন্তের বাতাস বইছে। রাবার বনে শুকনো পাতার মিছিল। শাখা প্রশাখায় নয়া জীবনের উন্মেষ। প্রকৃতির এমন আবহে জেগে ওঠে শুভ্রতার সকাল। বনের ঝরে পড়া পাতায় জীবিকা খুটতে ছুটে আসে একদল নারী ।
ঝরেপড়া রাবার পাতায় দুবেলা খাবারের জোগাড় হয় পাতা কুড়ানিদের। পঞ্চাশোর্ধ আম্বিয়া খাতুন তাদেরই একজন। স্বামী-সন্তানের পাশে থেকে দুমুঠো খাবারের সন্ধানে রোজ তার মধুপুরের জিগলবাইদ বাগানে আসা। জীবনের সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে ২ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। আম্বিয়ার মত অন্যরা কলুর বলদ। আদ্যোপান্ত ঘানি টানছেন সংসারের। তবে দিনশেষে হাতে পাওয়া মজুরিতে নুন আনতেই পান্তা ফুরায়।
কিশোরীর নাম সেলিনা বিশ্বাস। অভাব ঘোচাতে রাজশাহীর প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে স্বামীকে নিয়ে পা বাড়িয়েছে শহরের পথে। কাজের সন্ধানে এখন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলায় বুড়ার বাজার এলাকায়। চড়া রোদ্দুর মাথায় করে ভরদুপুরে লাল মাটির বুকে করছে কোদালের কসরত। পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মাটি খুড়ে তুলছে হলুদ। দিনশেষ মজুরি জোটে মাত্র দুই থেকে আড়াইশো টাকা।
বড়ই ক্লান্ত কান্দুরি বেগম। কামার শালার হাঁপড়ের মতো তার চলছে ফুসফুস। কান্না চেপে আসা গলায় তবুও সান্ত্বনার গীত। সুরের মোহে একটুখানি ক্লান্তি দূর করার চেষ্টা। ২৫ পয়সা থেকে শুরু হয় তার কাজ। জীবন সায়াহ্নে মজুরি এখন ২০০ টাকা। তবে, দ্রব্য-মূল্যের চড়া বাজারে তা বড়ই ক্ষুদ্র। এই জনপদের কৃষি অর্থনীতিতে গ্রামীণ নারীদের মজুরি পুরুষের অর্ধেকেরও কম।
কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের কৃষির উৎপাদন বাড়াতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। সেই সাথে কৃষি কাজে নারী শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে।
শুধু উৎপাদন নয়, কৃষিপণ্য বাজারে পৌঁছানো এবং বিক্রিসহ সব কাজে তাঁদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোকে কৃষি খাতে নারী উদ্যোক্তা তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ ও সহায়তা বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।