রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টা নাগাদ একই সময় দু'টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে রাজধানীতে। একদিকে বনশ্রীতে গুলি চালিয়ে ছিনিয়ে নেয়া হয় ১৬০ ভরি স্বর্ণ ও লাখ টাকার বেশি, অন্যদিকে মোহম্মদপুর টাউন হল এলাকায় রিকশার যাত্রীদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। এছাড়া মিরপুর ১ এ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির বাসায়ও হামলার ঘটনা ঘটেছে একই রাতে।
ঘটনার পরপরই হাজির হয় সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এসময় আবাসিক এলাকা ও ব্যক্তি নিরাপত্তায় বাড়িওয়ালা ও সোসাইটির কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন তুলেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় একজন বলেন, 'যারা দায়িত্বে আছে, তারা একদম ব্যর্থ। তারা দায়িত্ববান লোক, কজনও এখানে আসেনি। বলতে গেলে আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই।'
অন্য একজন স্থানীয় বলেন, 'চাবির জন্য বাড়িওয়ালার কাছে যাই, আমি বাড়িওয়ালার দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে অবস্থা খারাপ। কিন্তু তাদের কোনো সাড়াশব্দ নেই। কেউ গেট খুলেনি।'
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই দেশে বাড়ছে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা। প্রতিনিয়ত অবনতি হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির।
এমন পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ব্যর্থতার দায়ে তার পদত্যাগের দাবিতে রোববার রাতে মিছিল করে ছাত্ররা। দেয়া হয় ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম। পরে মাঝরাতে সংবাদ সম্মেলন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। দাবি করেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়া হচ্ছে আরও পদক্ষেপ। জানান, গত ১৬ বছরে ফ্যাসিবাদী আওয়ামীরা অনেক অর্থ লুটপাট ও পাচার করেছে। যা খরচ করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। আশ্বাস দেন সোমবার থেকে পরিস্থিতির আরও উন্নতি দেখা যাবে। সেই সাথে আওয়ামী দোসর ও সকল সন্ত্রাসীরা যেখানেই থাকুক না কেন তাদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিনে দিনে আরও উন্নত হবে। এবং এটার অবনতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এবং দেশকে যারা অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, তাদের কোনো অবস্থায় ছাড় দেবো না। এই আওয়ামী দোসরদের আমরা কোনো অবস্থায় ছাড় দেবো না। তাদের কাছে প্রচুর টাকা আছে, এই টাকা তারা বিভিন্নজনের মাঝে, বিভিন্নভাবে ছড়াচ্ছে এবং দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা কোনো অবস্থায় সফল হবে না।'
তিনি বলেন, 'যে কারণে আমাকে পদত্যাগ করতে বলে, সে কারণগুলো যদি আমি উন্নতি করে দিতে পারি তাহলে তো আর কোনো পদত্যাগের প্রশ্ন আসে না।'
এদিকে একই কথা বলছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। রাজশাহীর এক সেমিনারে অংশ নিয়ে এ কথা জানান তিনি।
বাহারুল আলম বলেন, 'নগরের ক্রাইমটা আসলে আলাদা। এটা সারাদেশের সাথে পুরোপুরি মেলে না। এটার জন্য আমাদের একটু আলাদা স্ট্রাটেজি নিতে হবে। সেটা আমরা নেয়ার জন্য চেষ্টা করছি। র্যাব, এন্টি-টেরোরিজম ইউনিট, ডিএমপি মিলে একটা ইনসেন্টিভ পেট্রোল প্রোগাম নিয়েছে। আজ থেকে এটা বাস্তবায়িত হবে আশা করি। আমরা দেখি এভাবে উন্নতি হয় কি না। না হলে আমাদের অন্য স্ট্রাটেজি নিতে হবে।'
তিনি বলেন, 'একটা গোষ্ঠী চাচ্ছে না। এটা তো স্বাভাবিক।'
রাজশাহীতে ওই সেমিনারে অংশ নেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ফ্যাসিবাদের দোসররা কোটি কোটি টাকা খরচ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, 'পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি আছে। এদের কিছু লোক পালিয়েছে, বেশিরভাগ দেশে থেকে গেছে। এবং তাদের হাতে হাজার হাজার কোটি টাকা আছে। এগুলো তো বানানো কতা না, আপনারা জানেন। টাকা থাকলে, বদমতলব থাকলে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করার মতো অনেককিছু করা যায়। তাদের একটা রোল থাকতে পারে এবং আছে বলেও আমরা অনেকে বিশ্বাস করি। এছাড়াও যারা স্বভাবগত অপরাধী তাদেরও ভূমিকা আছে এখানে। আমাদের ব্যর্থতা আছে এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের প্রচণ্ড তাড়না এবং চেষ্টা আছে।'
চলমান পরিস্থিতিতে ছিনতাই প্রতিরোধে রাজধানীতে পুলিশের তিনটি বিশেষায়িত ইউনিট সোমবার থেকে মাঠে নামছে।