গত সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা দেয় ইউনিক রোড রয়েলসের একটি বাস। রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর এলাকায় বাসটি পৌঁছালে ডাকাত দলের কবলে পড়ে। লুট করা হয় যাত্রীদের টাকা, মোবাইলসহ মূল্যবান মালামাল। এমনকি বাসে থাকা নারীর শ্লীলতাহানির অভিযোগও ওঠে।
বাসের যাত্রীদের অভিযোগ, প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকায় মহাসড়ক অনিরাপদ হয়ে উঠছে। তাই মহাসড়কে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির মতো ঘটনা ঘটছে।
একজন যাত্রী বলেন, 'ছুরি-চাকু দিয়ে আমাদের ভয় দেখিয়ে জনগণের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে যাচ্ছে।'
অন্য একজন যাত্রী বলেন, 'পুলিশ যদি এই স্ট্যান্ড থেকে অন্য স্ট্যান্ডে পাহাড়ায় থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে ডাকাতি বন্ধ হতে পারে। আর এত নিখুঁতভাবে কীভাবে তারা ডাকাতি করে। এটার একটা তদন্তের দরকার।'
পরিবহন সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রশাসনের দায়িত্ব অবহেলায় মহাসড়কগুলোতে ডাকাতি বাড়ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশি টহল বাড়ানোর দাবি তাদের।
একজন বাস চালক বলেন, 'আমরা ড্রাইভার, হেল্পার, কন্ট্রাক্টর, যারা রোডে থাকি সবাই দোষ দেয় আমাদের পর যে আমরা আর সাথে জড়িত। অথচ আমাদের পেটে ঠিকমতো ভাত যাচ্ছে না।'
অন্য একজন বাসচালক বলেন, 'আমরা তো গাড়িতে থাকি মাত্র তিনজন লোক। আমাদের তিনজনের পক্ষে অস্ত্রধারীদের সামনে কিছু করা সম্ভব না আমাদের।'
পরিবহন শ্রমিক নেতারা বলছেন, মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও যানবাহনগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং ড্রাইভার-হেলপারদের বেতন বাড়ানো হলে সড়ক নিরাপদ হবে।
টাঙ্গাইল জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন বলেন, 'সিসি ক্যামেরা থাকলে যেমন যাত্রীর নিরাপত্তা, তেমন ড্রাইভারের নিরাপত্তা, তেমন গাড়ির নিরাপত্তা আছে। ত কোটি টাকার গাড়ি, লাখ টাকার গাড়িতে মাত্র ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ করলে আমরা সকলেই নিরাপত্তায় থাকতে পারি। আমাদের ড্রাইভার কন্ট্রাক্টরদের মাসিকভাবে একটা বেতন সিস্টেম করে দিক। আমরা যেন কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত না হই। আমার সংসার যদি অভাবমুক্ত হয়, আমি নিজেও অভাবমুক্ত থাকবো। তাহলে আমি ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকবো।'
টাঙ্গাইল জেলা নিরাপদ সড়ক চাইয়ের সাধারণ সম্পাদক মো. মহিবুজ্জামান মুক্তা বলেন, 'প্রতিটি জায়গায় পয়েন্টে পয়েন্ট চেক করা হতো, ভিডিওতে প্রতিটি যাত্রীর ছবি নেয়া হতো। সেগুলো মনে হয় এখন স্থবির হয়ে পড়েছে।'
অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে দিনের বেলায় দু'টি ও রাতে পুলিশের চারটি টহল টিম দায়িত্ব পালন করে। মহাসড়কে চুরি-ডাকাতির ঘটনায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তা।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. শরিফ বলেন, 'এই বিষয়ে এসপি স্যারের সাথে কথা বলেন।'
জেলা পুলিশ সুপার জানান, সম্প্রতি বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় তদন্ত চলছে। ইতোমধ্যেই তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, 'এরইমধ্যে এই মহাসড়ক বাস ডাকাতির তিনজন সক্রিয় সদস্য মুহিত, সবুজ এবং শরিফুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। এই ঘটনা তারা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। তাদের সাথে আরও কয়েকজন ছিল। আমরা সে বিষয়ে তদন্ত করছি, আশা করছি শিগগিরই এই ঘটনার পুরো রহস্য উদঘাটন করতে আমরা সক্ষম হবো।'
বাস ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আদালতে পাঠালে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নওরিন মাহবুব মুহিদকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এছাড়াও সবুজ ও শরীফ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।