বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও কার্যকর করার প্রস্তাব

0

বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও কার্যকর করার প্রস্তাব দিয়েছে বিচারবিভাগ সংস্কার কমিশন। আজ (বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বিচারবিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।

বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট সংবিধান-সংশোধনী বিষয়ে প্রতিবেদনের ৬ নম্বর পৃষ্ঠা ৮ পয়েন্টে বলা হয়, ১. প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকদের নিয়োগের সাথে সংশ্লিষ্ট সংবিধানের বিধানগুলো সংশোধন, যার মধ্যে রয়েছে— অনুচ্ছেদ ৪৮ (৩) (রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাকে সীমিত করে নিয়োগ কমিশনকে ক্ষমতায়িত করা), ৫৫(২) (প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতা থেকে প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকদের নিয়োগের বিষয়কে পৃথক করা), ৯৪ (বিচারকদের সংখ্যা নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির মতকে প্রাধান্য দেয়া এবং আপিল বিভাগের ন্যূনতম বিচারক সংখ্যা ৭ জন করা), ৯৫ (রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারককেই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন অর্থাৎ, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতির কোনো স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা থাকবে না বা নির্বাহী বিভাগের কোনো প্রভাব থাকবে না।

২. বিচারক হিসাবে নিয়োগের যোগ্যতা পরিবর্তন, যথা-প্রার্থীকে কেবল বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং তার বয়স অন্যূন ৪৮ (আটচল্লিশ) বছর হতে হবে। বিচারকদের অবসরের বয়স বিদ্যমান ৬৭ বছরের পরিবর্তে ৭০ করা যা ভবিষ্যতে নিযুক্ত বিচারকদের জন্য প্রযোজ্য হবে। বিদ্যমান ১০ বছরের পেশাগত অভিজ্ঞতার পরিবর্তে ১৫ বছরের পেশাগত বাস্তব অভিজ্ঞতার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা)। সংবিধানে নতুন বিধান ৯৫ক অনুচ্ছেদ সংযোজনের মাধ্যমে বিচারপতি নিয়োগ কমিশন এর বিধান করা।

৩. সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা এবং স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠার জন্য ৬৪ক অনুচ্ছেদ সংযোজনসহ বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করার উদ্দেশ্যে সংবিধানের ষষ্ঠ ভাগের এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিধানাবলি সংশোধন।

এদিকে বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি কমাতে প্রতিবেদনের ৮ পৃষ্ঠার ১৪ পয়েন্টে সুপারিশ করা হয়েছে, বিচারকদের ছুটি, বিভিন্ন দিবস উদযাপন, আদালতে প্রকাশ্যে পরবর্তী তারিখ ঘোষণা না করা, আইনজীবীর মৃত্যুতে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ রাখা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে বিচারপ্রার্থীগণ যে হয়রানির শিকার হন, তার প্রতিকার বিধান।

এছাড়া বিচার বিভাগের দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রতিবেদনের ৮ পৃষ্ঠার ১৫ পয়েন্টে বলা হয়েছে, ১. সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন সকল পর্যায়ের বিচারকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য দুর্নীতি বিরোধী সুষ্পষ্ট বিধানসম্বলিত আচরণবিধিমালা প্রণয়ন। প্রতি তিন বছর পর পর সুপ্রিম কোর্ট এবং অধস্তন আদালতের বিচারকদের সম্পত্তির বিবরণ সুপ্রিম কোর্টে প্রেরণ এবং তা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করা।

২. প্রতি তিন বছর পর পর সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সম্পত্তির বিবরণ সুপ্রিম কোর্টের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে এবং অধস্তন আদালতের ক্ষেত্রে জেলা আদালতের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা।

৩. সুপ্রিম কোর্ট এর বিচারকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ লিখিতভাবে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল এর কাছে পৌঁছানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ বাক্স স্থাপন এবং ই-মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ দাখিলের জন্য ডেডিকেটেড ই-মেইল অ্যাড্রেস জনসাধারণকে প্রদান করা।

৪. অধস্তন আদালতে কর্মরত বিচারকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের সমন্বয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রাথমিক তদন্ত কমিটি গঠন করা। তদন্ত কমিটি কর্তৃক প্রতি ৩ মাস পর পর সিদ্ধান্ত প্রদান। তদন্ত কমিটিতে অভিযোগ জানানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ বাক্স স্থাপন এবং একটি ডেডিকেটেড ই-মেইল অ্যাড্রেস জনসাধারণকে প্রদান করা। অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিরীক্ষার জন্য জেলা পর্যায়ে গঠিত কমিটি কর্তৃক দাখিলকৃত সকল অভিযোগ পর্যালোচনা করা এবং অভিযুক্ত কর্মকতা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা।

৫. অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দাখিলের জন্য প্রতিটি জজশীপ ও ম্যাজিস্ট্রেসিতে একটি অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা এবং ই-মেইলের মাধ্যমে দুর্নীতির শিকার ব্যক্তি যেন তাঁর অভিযোগ জানাতে পারে, সে জন্য জনসাধারণকে ওয়েব সাইটের মাধ্যমে একটি ডেডিকেটেড ই-মেইল অ্যাড্রেস (যা প্রতিটি জজশীপ ও ম্যাজিস্ট্রেসির জন্য আলাদা হবে) প্রদান করা।

৬. আইনজীবীগণের দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি জেলায় পৃথক পৃথক অভিযোগ গ্রহণ ও তা নিষ্পত্তির জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা।

৭. বিচারাঙ্গণে দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য একটি অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা (Grievance Redress System) চালু করা।

এএম