মানবিক বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা সংকট ধীরে ধীরে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিগত দেড়যুগেও এ সমস্যার যৌক্তিক কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি বাংলাদেশ মিয়ানমার। এবার বিশ্বমঞ্চে জোরেসোরে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আওয়াজ তুলছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এই বছরই একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করছে বাংলাদেশ। যেখানে ১৭০টিরও বেশি দেশ অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। সেই সম্মেলনকে ঘিরে প্রধান উপদেষ্টা বেশ তৎপর সময় কাটাচ্ছেন সুইজারল্যান্ডের দাভোস শহরে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও মন্ত্রীদের সাথে বৈঠক করে যাচ্ছেন। তুলে ধরছেন জুলাই বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। তবে সবকিছু ছাপিয়ে সরকারের প্রধান মূল তৎপরতা রোহিঙ্গা সংকটের দিকে। প্রেস সচিব জানান, রোহিঙ্গা সংকটকে বিশ্বের বড়বড় সমস্যাগুলোর কেন্দ্রে নিয়ে যেতে চান ড. ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘ড. ইউনূস কথা হচ্ছে পুরো রোহিঙ্গা সংকটকে আবার গ্লোবাল আলোচনার ফোকাসে আনতে হবে। গ্লোবাল ইস্যুগুলোর সামনের সারিতে নিয়ে আশা।’
সুইজারল্যান্ড সফরের দ্বিতীয় দিনে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতরেসের সঙ্গে। সেই বৈঠকেও গুরুত্বের সাথে স্থান পেয়েছে রোহিঙ্গা ইস্যু। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের সরকারের প্রধানের সাথে। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করার আশ্বাসও দিয়েছেন তারা।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে মূল আলোচনা ছিল, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘ আরো কীভাবে নিবিড়ভাবে কাজ করবে। এছাড়া জাতিসংঘ বড় একটি রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কনফারেন্স করতে যাচ্ছে। যেখানে ইউএনও থাকবে। আমরা আশা করছি ১৭০ টার বেশি দেশ এতে যোগদান করবে।’
সাইডলাইনে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করেছেন বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ও জার্মানির ফেডারেল মন্ত্রীসহ অনেক বিশ্বনেতাদের সাথে। বৈঠকগুলোতে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এজেন্ডা সম্পর্কে বিশ্বনেতাদের অবহিত করেন প্রধান উপদেষ্টা। পাশাপাশি তিনি জানান, ঐকমত্য তৈরি হওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই মাসের একটি সনদে স্বাক্ষর করবে। দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক যোগাযোগ স্থাপন, বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি ও বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক সামনে সংস্কারের কী হতে যাচ্ছে সেগুলো নিয়ে কথা বলেছেন। এই আন্দোলনের সামনে থাকা তরুণ ছাত্র সমাজ কী বাংলাদেশকে দেখতে চায় সেটা ওরা গ্রাফিতির মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছে এই বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টা তুলে ধরেছেন। এছাড়া তিনি তুলে ধরেছেন বাংলাদেশে এখন ব্যবসার জন্য প্রস্তুত কারণ দেশে রাজনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক, গণতন্ত্র ফিরেছে, আইন শৃঙ্খলা উন্নত হয়েছে। এজন্য বিনিয়োগের জন্য এটাই সবচেয়ে ভালো সময় বলে তিনি তুলে ধরেছেন।’
সাইডলাইনের এসব বৈঠকে বিশ্বনেতাদেরকে বাংলাদেশের সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পাশাপাশি তিনি নিজেও আমন্ত্রিত হন আরব আমিরাতে বিশ্ব সরকার সম্মেলনে।