টেকসই রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ হিসেবে ১১ টি ছায়া সংস্কার কমিশনের ৪র্থ কর্মশালা। কর্মশালায় সঞ্চালনা করেন ছায়া সংস্কার কমিশনের আহ্বায়ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাসিমা খাতুন।
কর্মশালায় আরো উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ড. এস এম আলী রেজা ও সহযোগী অধ্যাপক মেজবা-উল-আযম সওদাগর।
কর্মশালায় ছায়া সংস্কার কমিশনের আহ্বায়ক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, টেকসই রাষ্ট্র সংস্কার উদ্যোগ হিসেবে ১১টি ছায়া কমিশন কাজ করছে। এগুলো সরকারের সংস্কার কমিশনের বিকল্প। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কর্তৃত্ববাদী এবং ফ্যাসীবাদী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে সেজন্য এই কমিশনগুলো কাজ করবে ও কমিশনগুলোর প্রস্তাবনা বাংলাদেশের নাগরিকদের কল্যাণমূলক রাষ্ট্র পাওয়ার জন্য সহায়তায় করবে।
সরকারের রাষ্ট্র সংস্কার কমিশনের বিপরীতে ছায়া সংস্কার কমিশনের প্রয়োজনীতা নিয়ে তিনি বলেন, সরকার যে ধরনের সংস্কার কমিশন গঠন করেছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গিতে কমিশনগুলোর সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। সরকারের গঠিত কমিশনের সঙ্গে ছায়া কমিশনের মৌলিক পার্থক্যের জায়গা হলো সরকারের গঠিত কমিশন এককভাবে কাজ করছে এবং কমিশনগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা বিদ্যমান। অপরদিকে ছায়া সংস্কার কমিশনের ১১টি কমিশন একটি অপরটির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে।
ছায়া সংস্কার কমিশনগুলোতে সরকারের গঠিত সংস্কার কমিশনের বাইরেও কিছু কমিশন তৈরি করা হয়েছে। যেমন রাজনৈতিক দলব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। কারণ রাজনৈতিক দলের মধ্যে জবাবদিহিতার বিষয়টা একটি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয়। এতে করে জবাবদিহিতামূলক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। এটি মূলত করা হয়েছে নাগরিকবান্ধব রাজনৈতিক দল ব্যবস্থা প্রণয়ন করার জন্য। এছাড়া দায়িত্বশীল শাসন বিভাগের জন্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। দায়িত্বশীল শাসন বিভাগ রাষ্ট্রে সুশাসন নিশ্চিত করবে। সবগুলো কমিশনের শুরুতেই ‘টেকসই’ উল্লেখ করা হয়েছে যা বাস্তবায়িত হলে টেকসই উন্নয়নের স্বপ্ন নিশ্চিত হবে।
ছায়া সংস্কার কমিশনের স্থায়িত্বকাল সম্পর্কে বলা হয়েছে যেহেতু যতদিন রাষ্ট্র থাকবে ততদিন সংস্কার থাকবে সেহেতু কমিশনগুলোর অভিজ্ঞতা দীর্ঘ মেয়াদে কাজে লাগবে। তবে ছায়া সংস্কার কমিশনের স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনা হলো কমিশনগুলো সমন্বিত ভাবে সুপারিশ তৈরি করে জাতীয় সেমিনার ও প্রেস কনফারেন্সর মাধ্যমে জাতিকে অবহিত করা। এখন পর্যন্ত চারটা কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৫ম কর্মশালার পরে সংক্ষিপ্ত আকারে একটি জরিপ হবে। জরিপের উপর ভিত্তি করে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় পর্যায়ে সেমিনার মাধ্যমে চুড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি হবে। সেই রিপোর্টটি সরকারের ঐক্যবদ্ধ কমিশনের নিকট হস্তান্তর করা হবে। তারপর মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে সরকারের সংস্কার কমিশনগুলো এবং ছায়া সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ সরকার কতটা বাস্তবায়ন করেছে তা পর্যবেক্ষণ করা হবে।
কর্মশালায় উল্লেখ করা হয়, রাষ্ট্র সংস্কার যেহেতু দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, তাই ছায়া কমিশনগুলোর দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনাও রয়েছে। দীর্ঘ সময়ে সংস্কার কমিশনগুলোর নিজস্ব এরিয়াতে জাতীয় প্রয়োজনে এবং সংকটে এক্সপার্ট অপিনিয়ন দিবে। উদাহরণ স্বরূপ, নির্বাচন নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে ছায়া নির্বাচন সংস্কার কমিশন কাজ করবে। প্রাথমিকভাবে ২০ বছরের কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে ছায়া সংস্কার কমিশন কাজ করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাসিমা খাতুন বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কার রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের অগ্রণী ভুমিকা পালন করা উচিত। বর্তমান সময়ে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য এ ছায়া সংস্কার কমিশনগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম বলেন,‘সরকারের উদ্যোগে গঠিত রাষ্ট্র সংস্কার কমিশনগুলোতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এক্সপার্টগণ সীমিতভাবে সংযুক্ত যা এ কমিশনগুলোর সীমাবদ্ধতা।’