৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের 'মার্চ টু ঢাকা' কর্মসূচিতে যোগ দিতে বাড়ি থেকে বের হবার সময় স্ত্রীকে বলেছিলেন, 'শিগগিরই ফিরে আসবেন।' কিন্তু এখনো বাড়ি ফেরেননি কাজল। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি।
কাজল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। ঘটনার দিন নারায়ণগঞ্জে বড় ভাইয়ের বাসা থেকে আন্দোলনস্থল যাত্রাবাড়ী এসে গুলিবিদ্ধ হন কাজল। আগারগাঁও নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ২ মাস আইসিইউতে চিকিৎসার পর গত ১ মাস ধরে রয়েছেন এইচডিইউতে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট এন্ড হসপিটালের মেডিসিন ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ ডা. মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘কাজল আমাদের কাছে যখন আসে তখন একদম খারাপ অবস্থা তার। মাথায় গুলি লেগে তার খুলি দিয়ে বের হয়ে যায়।’
২ সন্তানের বাবা মুরাদ। গুলশানে আফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে আন্দোলনস্থল মিরপুর ১০-এ হঠাৎই গুলি লাগে ঘাড়ে। গুলি ঘাড়ের স্পাইনাল কর্ড ভেদ করে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। দীর্ঘ সময় আইসিইউতে থাকার পর গেল ২১ শে জুলাই থেকে রয়েছেন এইচডিইউতে। গুলির আঘাতে তার ঘাড়ের নীচ থেকে পুরো শরীর অচল হয়ে গেছে।
চিকিৎসকরা বলছেন- কাজলের মতো মুরাদেরও দেশে চিকিৎসা নেই। সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিদেশ পাঠানোর দীর্ঘসূত্রিতায় তারা রয়েছেন উচ্চ সংক্রমণ ঝুঁকিতে।
ডা. মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘মাথার অপারেশন খুব ক্রিটিক্যাল। স্মুথলি যায় না আপ ডাইন হয়। আমাদের কাছে ৭ থেকে ৮ জনের রোগী ছিল তাদের মধ্যে আমাদের মেডিকেল বোর্ড দুইজন রোগীকে বিদেশে রিকমেন্ড করেছিলাম। তাদের মধ্যে কাজল ও মুরাদ।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় থাকা আরেকজন আশরাফুল। গুলি লাগে তার মাথায়। ২ দফা অস্ত্রোপচারের পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। ক্রিটিক্যাল কেয়ারে সেবা দেয়া চিকিৎসকরা বলছেন, মাথায় গুলিবিদ্ধ এত সংখ্যক রোগীকে একসাথে চিকিৎসা দেয়ার অভিজ্ঞতা নেই তাদের। তারপরও সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিতে কাজ করছেন তার।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট এন্ড হসপিটালের মেডিসিন ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ ডা. কাজী ইসমাইল হোসাইন বলেন, ‘হঠাৎ করে গুলিবিদ্ধ এত সংখ্যক রোগিকে চিকিৎসা দেয়ার অভিজ্ঞতা নেই আমাদের। অনেক চাপ ছিল আমাদের ক্যাপাসিটির বাহিরে।’
জুলাইয়ের ছাত্র জনতার আন্দোলনে আহত হয়ে আগারগাঁওয়ের নিউরোসাইন্স হাসপাতালে ৫৪০ জন রোগী সেবা নেন। তাদের মধ্যে ১৫৯ রোগীর ভর্তির প্রয়োজন হয়। ভর্তি রোগীদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়। যাদের মধ্যে মারা যান ৩৩ জন।