নাগরিক জীবনে ছোট ছোট গন্তব্যে যেতে রিকশায় চলাচল কখনো প্রয়োজনে, কখনো প্রিয়জনের পাশাপাশি বসার খানিক অবসর।
টাঙ্গাইল থেকে আসা ১৯ বছর আগে ঢাকায় আসেন রহিম মিয়া। সেই থেকে কত রঙবদল হলো এই শহরের। চওড়া হয়েছে সড়ক। কিন্তু পরিধি কমেছে রিকশার তিন চাকার সীমানায়। তবুও চলতে চলতে চলে দৃশ্যকাব্যের গাঁথুনি, শহরের অলিগলিতে চাকার ঘূর্ণিতে আর টুংটাং বেলের শব্দে শব্দে বোনা সুরের কাহন।
রিকশা চালকদের একজন বলেন, ‘ভাষা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। আগে আমরা স্যার বলতাম তারা ড্রাইভার বলতো। কিন্তু এখন এইসব কিছুই নেই। তুই করে বলে। যতদিন যাচ্ছে তত খারাপই হচ্ছে।’
১৯৬৯ সালে প্রথম মিয়ানমার থেকে চট্রগ্রামে আসে রিকশা, যদিও ঢাকার রিকশা আসে কলকাতা থেকে। কিন্তু এক সময়ে প্রয়োজনীয় আর বিলাসী বাহন হিসেবে পরিচিত রিকশা এখন কেন বিরক্তির কারণ হলো?
অসহিষ্ণু পতঙ্গের ঝাঁকের মতো ভিড়। যেখানে নেই নিয়ম মেনে চলার মনোভাব। দৃশ্যপট যেন মনে করিয়ে দেয় একেই বুঝি বলে মগের মুল্লুক। শৃঙ্খলাহীন রিকশাচালকের অবারিত দৌরাত্ম্য।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তথ্য মতে, কাগজে-কলমে শহুরে রিকশা ১ লাখ ৮০ হাজার কিন্তু বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ বিলসের মতে, সড়কে চলছে প্রায় ১২ লাখ প্যাডেলচালিত আর অটোরিকশা প্রায় ৬ থেকে ৭ লাখ।
যেখানে সেখানে দাঁড়ানো, উল্টোপথে হরদম চলাচল আর অতিরিক্ত গতিতে চলাচল আর মূল সড়কে তোয়াক্কাহীন যাতায়াত যেন নীতি এসব রিকশার। সড়কে সবচেয়ে বেশি বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী অবৈধ অটোরিকশা।
রিকশা চালকদের একজন বলেন, ‘লাইসেন্স আছে রিকশার। কিন্তু আমাদের ড্রাইভারদের কোনো লাইসেন্স নেই।’
শহরে চলা প্যাডেলচালিত রিকশা ভাড়া দিতে হয় দিনে ১২০ টাকা। বিপরীতে আয় এবং সহজে চলাচলযোগ্য হওয়ায় অটোরিকশাকে দিতে হয় দিনে ৩ থেকে ৪শ' টাকা। এই নগরে সড়কে চলাচলকারী ও পথচারীদেরও সইতে হচ্ছে যার উৎপাত।
পথচারীদের একজন বলেন, ‘আমাদের রাস্তা দিয়ে হাঁটা চলা করতে সমস্যা। রিকশা এপাশ ওপাশ দিয়ে চলাচল করে।’
আরেকজন বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো অনেক দ্রুত চলাচল করে। যার ফলে রাস্তায় চলাও একটু সমস্যা।’
সড়কে ট্রাফিক পুলিশের নাকের ডগায় চলছে অটোরিকশা। কিন্তু নিয়ন্ত্রক কি অসহায়, নাকি আইনের জোরালো প্রয়োগ কম।
ট্রাফিক পুলিশের একজন বলেন, ‘আমাদেরকে তারা ভয় পেত। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এখন তারা বেশি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। মহাসড়কে এসে ঝামেলা সৃষ্টি করছে।’
পুলিশ বলছে, রিকশা নিয়ে কোন আইন না থাকায় তেমন কিছু করার থাকে না ডিএমপি'র। এ জন্য আইন করে সরকারি সব সংস্থাকে একসঙ্গে কাজ করার পাশাপাশি শহরের নাগরিকদেরও অনিয়ম ঠেকাতে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানান এই কর্মকর্তা।
ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশা মোটরযান আইনের আওতায় পড়ে না। এই সুযোগটা অনেকসময় নেয়ার চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে চালক ও যাত্রী যারা রয়েছে তাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিবন্ধন না থাকায় আইন প্রয়োগ করা যাচ্ছে না, মূল সড়ক থেকে অটোরিকশা বন্ধ করতে হবে। সড়কে প্রয়োজন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোর নজরদারি ।
বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ‘নিবন্ধন না থাকায় পুলিশের পক্ষে আইন প্রয়োগ করতে পারছে না। প্রথমেই চার্জিং স্টেশনগুলোতে অভিযান করতে হবে। অটোরিকশাকে বন্ধ করতে হবে যাতে আর সংখ্যায় না বাড়ে।
মাত্র ৬ থেকে ৮টি রিকশা একটি বাসের সমান সড়ক দখলে নেয়। তাই যানজট কমাতে ঢাকার সড়ক থেকে কমাতে হবে রিকশা, এমন মত বিশেষজ্ঞদের।