আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরের শাসন আমলে সবচেয়ে আলোচিত শব্দ ছিল উন্নয়ন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা সবার মুখেই শোভা পেত উন্নয়নের নানা গল্প। কিন্তু ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর একে একে উঠে আসছে সেই উন্নয়নের আড়ালের দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার নানা তথ্য।
রাজধানীতে সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘সংস্কার ও টেকসই উন্নয়নের সমন্বয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারের বক্তাদের বক্তব্য ঘুরে ফিরে উঠে আসে অপরিকল্পিত ও ত্রুটিপূর্ণ উন্নয়নের কথা।
পতিত সরকারের উন্নয়নকে বিধ্বংসী উন্নয়ন আখ্যা দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন লোক দেখানো উন্নয়ন করে ব্যাপক লুটপাট করেছে বিগত সরকার।
উমামা ফাতেমা বলেন, এ ডেভেলপমেন্টের কোনো কিছুই সাসটেইনেবল না। আমরা যদি আমাদের হেলথ সেক্টরের কথা চিন্তা করি, এডুকেশন সেক্টরের কথা চিন্তা করি এমনকি গ্রামগুলোর কথা চিন্তা করি আমাদের শ্রমিকদের কথা চিন্তা করি, এই যে ডেভেলপমেন্টগুলো হলো সবকিছুই আসলে দিনশেষে কিছু বিল্ডিং বানানো।এবং এ বিল্ডিং বানানোকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ পরিমাণের লুটপাট করা।’
অবকাঠামো খাতে আওয়ামী লীগ সরকারের অপরিকল্পিত বিনিয়োগের কারণে অর্থনীতি চ্যালেঞ্জে পড়েছে জানিয়ে এ খাতে সংস্কার দাবি করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। আর প্রকল্প গ্রহণের আগে গণশুনানির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল হক।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বা বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে যে বড় চ্যালেঞ্জ যাচ্ছে তার একটি বড় কারণ হলো অপরিকল্পিতভাবে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ এবং সেটির দায়ভার এখন এ সরকারকে টেনে নিয়ে যেতে হচ্ছে।’
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ‘কোনো একটা সিটিকে যদি ডেস্ট্রয় করতে হয় অ্যাটম বোমা ফেল আর না হলে ফ্লাইওভার বানাও। এ দুটো দিয়েই কিন্তু একটা সিটিকে ডেস্ট্রয় করা যায়। শহর ধংসের জন্য আমরা যেসব প্রকল্প নিয়েছি, পাবলিক কনসালটেশন ছাড়া। ডিসিশন মেকিং এন্ডে যারা আছে তারা জনগণের মতামত না নিয়েই এসব প্রকল্পের কাজ নিয়ে নিয়েছে।’
বিগত সরকারের আমলে হওয়া দুর্নীতির অবকাঠামো সম্পূর্ণ ভেঙ্গে দিতে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে বলে জানান বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
তিনি বলেন, সংস্কারের মধ্যে মূল দুটি জিনিস। একটা হচ্ছে নীতি সংস্কার, আরেকটা হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার। প্রথমে যেটা চেষ্টা করেছি, এই যে একটা দুর্নীতি হয়েছে এ দুর্নীতির অবকাঠামোকে সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দিয়েছি। তো আমরা চাচ্ছি উন্নয়নকে জনগণের প্রয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে। যে গ্যাপগুলোর কারণে মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পায় না সেগুলো আমরা পূরণ করার চেষ্টা করছি। ’
এছাড়া সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রকল্প প্রণয়ন এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে জোর দেন বক্তারা।