ঘটনার শুরু ৮ অক্টোবর। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ফেসবুক পোস্টে জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে আখ্যা দেন।
ওই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা। এমন ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ আওয়ামী বিরোধী জোট ও দলগুলো।
চলতি মাসের মাঝামাঝি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দুই নেতা সারজিস ও হাসনাতকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলেছিলেন সাবেক রসিক মেয়র মোস্তফা। তবে তার এই আহ্বানে সাড়া আসেনি ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে। এরই মধ্যে ১৬ অক্টোবরের পর দফায় দফায় উভয় পক্ষের প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও রংপুর শহরে। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে মেয়র মোস্তফার সাথে ছাত্র-জনতার বিরোধ হয়ে ওঠে রংপুরের টক অব দা টাউন।
সারজিস ও হাসনাতকে প্রতিহত করার ঘোষণার মধ্যেই ২৬ অক্টোবর রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিষ্ঠা বার্ষিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রংপুর আসেন সারজিস আলম। জাতীয় পার্টির ঘোষণার পর সারজিস আলম রংপুরে গেলে লাঠি ও ঝাড়ু মিছিল করে প্রতিবাদ জানায় দলটি। এরপর থেকে পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি হতে থাকে।
অবশ্য সারজিস আলমের রংপুর সফর ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন সাবেক মেয়র মোস্তফা। সেসময় পুলিশি প্রহরায় রংপুর আসার সমালোচনাও করেন তিনি।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এমন বিরোধের সূত্রপাত হয় গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি মো. নুরুল হক নুরের বক্তৃতার মাধ্যমে।
ভিপি নূর বলেন, 'জাতীয় পার্টির মতো একটি পরগাছা, পা চাটা দালালকে জায়গা দেয়া হবে না। জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের রাজনীতির ভাইরাস এই ভাইরাস কীভাবে বঙ্গভবনে আসে! জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।'
ভিপি নূরের ঘোষণার পর থেকেই দৃশ্যপট বদলে যেতে শুরু করে। ১২ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত এবং ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করলেও ডাক পায়নি জাপা।
১৭ অক্টোবর জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের সভায় জিএম কাদের ঘোষণা দেন ২ নভেম্বর চলমান বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে জাতীয় পার্টি। তবে তার আগেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়ালো আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিগত তিনটি নির্বাচনে অংশ নেয়া দলটি।
এমন প্রেক্ষাপটে ঢাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতির জেরে রংপুরে দলীয় কার্যালয়ে জড়ো হতে থাকেন জাপার নেতা কর্মীরা। বৃহস্পতিবার রাত আটটা থেকে সাবেক মেয়র মোস্তফার নেতৃত্বে খণ্ড খণ্ডভাবে জড়ো হতে থাকেন তারা। তবে এ সময় রংপুরে কোন কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি দলটিকে।
গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের জবাবে কোনো কথা বলেননি জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তবে অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি জানিয়েছেন, ঢাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে দলটির কেন্দ্র। আর রংপুরের দল ও দলীয় কার্যালয় রক্ষায় প্রস্তুত থাকবে জাপার নেতাকর্মীরা।