সাতমাসের সন্তানসম্ভবা ডেঙ্গু আক্রান্ত রুমানা বেগমের চোখে-মুখে রাজ্যের চিন্তা। এক মাস পরে ডেলিভারির তারিখ দিলেও ডেঙ্গুর কারণে গর্ভপাতের ঝুঁকি এড়াতে আগেভাগেই সিজার করার সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে এই দম্পতির।
পাশের বেডেই আরেকজন নয় মাসের সন্তানসম্ভবা মিনা বেগম। প্রথমবার মা হওয়ার যে আনন্দ সেটি যেন নিমিষেই গভীর উদ্বেগে পরিণত করেছে ডেঙ্গু।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী এ বছর পুরুষের থেকে নারীদের আক্রান্তের হার কম হলেও নারীদের মৃত্যুহার বেশি। রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে ডেঙ্গুতে ভর্তি রোগীদের মধ্যে নারী রোগীর সংখ্যা বেশি, যাদের অনেকেই জ্বর, মাথাব্যথা আর প্রচণ্ড পেটে ব্যথায় ভুগছেন।
এছাড়া রোগীর সাথে থাকা নারী স্বজনরাও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। নারীদের মধ্যে সন্তানসম্ভবা যারা আছেন তাদের প্লাটিলেট দ্রুত কমে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন তারা এমনটাই জানালেন দায়িত্বরত চিকিৎসক।
মুগদা মেডিকেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বিল্লাহ হোসেন বলেন, প্রেগন্যান্টদের ঝুঁকি বেশি। কারণ সে সময় বেশ কিছু জটিলতা থাকে। ডেঙ্গুতে আরো কিছু জটিলতা হয়। যেমন যদি প্লাটিলেটের কথা বলি সবাই এটি নিয়ে সচেতন। তো প্রেগনেন্সিতে এমনিতেই প্লাটিলেট কমে যায়। ডেঙ্গু হলে আরো কমে। তখন ঝুঁকি বেড়ে যায়।’
পুরুষদের মধ্যে দ্বিতীয়বার আক্রান্তের হার এ বছর অনেকটাই বেশি। এছাড়াও জ্বরের মাত্রা বেশি থাকায় নাক মুখ দিয়ে রক্তক্ষরণ নিয়েও এসেছেন অনেকে।
এবার আইসিইউতে ভর্তি থাকা রোগীদেরই মৃত্যু বেশি। দ্রুত প্রেসার কমে গিয়ে শকে গিয়েই ডেঙ্গুতে অধিকাংশ রোগীর মৃত্যু হচ্ছে আইসিইউতে।
মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. সত্যজিৎ কুমার সাহা বলেন, আইসিইউতে প্রতিদিনই আমাদের গড়ে ৩ থেকে ৪ জন রোগী ভর্তি থাকে। এ মাসে আমাদের এখানে মোট ৮ জন রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন। যারা আইসিইউতে থাকে তাদের অধিকাংশেরই শক সিনেড্রোম থাকে। এটা যখন বাড়তে থাকে তখন শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কম কাজ করে কিংবা কখনো একেবারেই কাজ করে না। তখন তাদের বাচানো খুব কঠিন হয়ে যায়।’
চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। যার মধ্যে শুধু অক্টোবরের ২০ দিনেই আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১৯ হাজার, মৃত্যু হয়েছে ৮৪ জনের যা চলতি বছরে সর্বোচ্চ।