শিক্ষা
দেশে এখন
0

যাত্রা শুরুর অপেক্ষায় কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

এক কালে কুড়িগ্রামের নাম শুনলেই দেশের মানুষের মানসপটে ভেসে উঠতো জীবনযাত্রার নিম্নমান আর পিছিয়ে পড়া জনপদের প্রতিচ্ছবি। তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার বিধৌত এ জেলার মানুষের জীবনমান অনুন্নয়নের বড় কারণ নদী ভাঙন, বন্যা আর শিল্পায়নের অপ্রতুলতা। এবার ধরলার কোলেই নতুন স্বপ্নের বীজ বুনছে কুড়িগ্রামসহ উত্তরের লাখো মানুষ। স্বপ্নের উপলক্ষ্য, যাত্রা শুরুর অপেক্ষায় থাকা কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। কৃষি গুচ্ছের আওতায় দু'টি বিভাগ চালুর মাধ্যমে এ বছর শুরু হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।

চলতি শিক্ষাবর্ষে, দু’টি অনুষদে ৪০ জন করে মোট ৮০ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আরো চারটি অনুষদ অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ইতোমধ্যে কুড়িগ্রাম শহরে দু’টি অত্যাধুনিক আবাসিক ভবন ভাড়া নেয়া হয়েছে। শ্রেণি কার্যক্রম চালু করতে কক্ষগুলো ডিজিটালাইজেশনও করা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে প্রশাসনিক ভবন।

বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ড. এ কে এম জাকির হোসেন জানিয়েছেন, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা মালয়েশিয়ার 'পুত্রা মালয়েশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়' এ ইন্টার্নশিপ করতে পারবেন, এজন্য ইতোমধ্যে সমঝোতা স্মারকও সাক্ষরিত হয়েছে।

তিনি বলেন, 'কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোর্স ক্রেডিট ট্রান্সফার করে এক বছর পুত্রা মালয়েশিয়া বিশবিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবেন।' পুত্রা মালয়েশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নীতিগত ভাবে সম্মত হয়েছেন বলেও যোগ করেন বর্তমান উপাচার্য।

ড. জাকির হোসেন বলেন, 'কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এই এলাকার মানুষের একটি স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা ২৫০ একর জমিতে একটি দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাস গড়ে তোলার জন্য ইতিমধ্যে দুটি ডিপিপি প্রণয়ন করা হয়েছে। ফিজিবিলিটি স্টাডি এর ডিপিপি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং অন্য ডিপিপি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অগ্রাধিকার সবুজ পতাকায় সংযুক্ত হয়েছে।'

এছাড়া কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তাবিত সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরি যা ওয়ানস্টপ সলিউশন হিসেবে কাজ করবে। প্রতিষ্ঠা হলে বিদেশের মত শিক্ষার্থীদের পার্ট টাইম কর্মেরও সুযোগ থাকবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

গবেষণানির্ভর বিশেষায়িত একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও সম্পূর্ণভাবে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে উঠার চেষ্টায় কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এজন্য বিভিন্ন অনুষদের অধীনে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তিগত দিক সংযুক্ত করে কোর্স কারিকুলাম তৈরি করা হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনায় আছে, শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপের সময় ইন্ডাস্ট্রি, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও মাঠপর্যায়ের কৃষকরা সংযুক্ত থাকবে। এজন্য বিভিন্ন শিল্পগ্রুপ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আধুনিক কৃষি গবেষণা পল্লি, চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, উদ্যোক্তা তৈরি করতে ইনস্টিটিউট অব এগ্রিবিজনেস অ্যান্ড এন্টারপ্রেনারশিপ, ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউট অব ফুড সেফটি অ্যান্ড পোস্ট-হারভেস্ট টেকনোলজিসহ ৩৩টি বিভাগে পাঠদানের অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। খোলার সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলে জানিয়েছে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

কুড়িগ্রাম জেলা জুড়ে বিদ্যমান ৪৫ হাজার হেক্টর চর এবং ২৫ হাজার হেক্টর জলাশয়কে গবেষণার মূল বিষয়বস্তু ধরে কৃষি অর্থনীতির নতুন ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তুলতে চায় নবপ্রতিষ্ঠিত কৃষি বিশেষায়িত এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। যেটি বাস্তবায়ন হলে আমূল বদলে যাবে কুড়িগ্রামের আর্থসামাজিক কাঠামো।

ইএ