গাজীপুরের পোশাক শ্রমিক আশানূর গুলিবিদ্ধ হয়েছে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার দিন। দুই মাস পার হলেও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি এখনও। বের করা সম্ভব হয়নি ডান হাতে থাকা রাবার বুলেট। শঙ্কা জেগেছে চিরতরে ডান হাতের কার্যক্ষমতা হারানোর। তার অভিযোগ, পুনর্বাসনের জন্য সিআরপিতে আনা হলেও পূর্ণ চিকিৎসা মিলছে না এখনও।
আশানূর বলেন, 'আমার যে ডান হাতের এই অবস্থা, আমি যে কিছু করতে পারবো না। এর জন্য আমার চিকিৎসার কথা কাকে জানাবো, কীভাবে জানাবো? আমি পারি না।'
গণঅভ্যুত্থানে আহত এমন কেউ কেউ অভিযোগ করছে পরিত্যক্ত রুমে চিকিৎসা দেয়ার। রয়েছে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবার রান্না ও পচা খাবার পরিবেশনার।
পোশাক শ্রমিক আশানূর। ছবি: এখন টিভি
একজন রোগী বলেন, 'মাঝে মাঝে তারা এ বেলার খাবার অন্য বেলা গরম করে বা অন্যভাবে দেয়। ব্যথায় আমি অস্থির হয়ে যাই। একজন বললো ডাক্তার যে রুমে আছে সে রুমে যাও, যাওয়ার পরে ওখানে বলে ডাক্তার নেই, ডাক্তার চলে গেছে। নার্স এসে মলম লাগিয়ে দিয়েছে।'
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্থদের পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) একটি দল। জানান এখনকার অনিয়মের কথা।
বিইউপির একজন শিক্ষার্থী বলেন, 'আমরা এখানে এসে দেখি যে ডাক্তাররা আছে তারা রোগীদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। দাসের মতো ব্যবহার করে। রান্নাঘরে যখন আমরা যাই, সেখানে পচা খাবার পাই।
পরিদর্শন শেষে সারজিস আলম জানান, আহতদের চিকিৎসায় সরকারের আরও তৎপর হওয়া জরুরি।
তিনি বলেন, 'সবচেয়ে অ্যাক্টিভ উপদেষ্টা হওয়া উচিত ছিল স্বাস্থ্য উপদেষ্টার। যে অফিস অফিসে করবে না। অফিস হাসপাতালে করবে। প্রতিটি হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে দৌঁড়ে বেড়াবে। আমরা তো শিক্ষার্থী, আমাদের আর্থিক সমস্যাও আছে, আমরা চাইলেই সবসময় একটা গাড়ি ম্যানেজ করতে পারি না। সে জায়গায় এ কাজগুলো তো করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ জায়গাগুলোতে দৌঁড়ে বেড়াবেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টাসহ এই সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তারা। আমরা আমাদের জায়গা থেকে এটা বারবারই বলেছি, তাদের যত অ্যাক্টিভলি কাজ করার কথা সেভাবে আমরা দেখতে পাই না।'
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে তবে আন্তরিকতা কমতি নেই তাদের। চিহ্নিত সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করতে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন তারা।
সাভারের সিআরপি প্রশাসনিক প্রধান শাহ মোহাম্মদ আতাউর রহমান বলেন, 'সিআরপির সে পরিমাণ সক্ষমতা নেই। সিআরপির নিজস্ব কোনো ফান্ড নেই। আমরা সকলের ফ্ন্ড নিয়ে সবাই মিলে একত্রিতভাবে কাজ করি। আমাদের এখানে ফাইভস্টার মানের সুবিধা চাইলে হবে না। আমাদের যতটুকু আছে ততটুকু দিয়েই চেষ্টা করি। আমাদের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। আমরা চেষ্টা করবো যে দিকগুলো তারা উল্লেখ করেছে সেগুলো নিয়ে আরও সতর্ক হওয়ার।'
এদিকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, আহতদের চিকিৎসার বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সাথে দেখছে। যোগ্যতা অনুযায়ী গণঅভ্যুত্থানে আহতদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনে গুরুতরদের বিদেশে পাঠানো হবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, 'সরকার খুবই সিরিয়াসলি দেখছে বিষয়টাকে। ডাক্তারদের কাছে অনেক কৃতজ্ঞ তারা যথেষ্ট যত্ন নিচ্ছেন। তারা কীভাবে জীবনযাপন করবেন এটা নিয়ে সরকারের একটা সিদ্ধান্ত আছে যে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দেয়ার চেষ্টা করা হবে যেন তারা ঠিকমতো জীবনযাপন করতে পারেন।'
এর আগে তিনি আগারগাঁওয়ে অবস্থিত পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গণঅভ্যুত্থানে আহতদের খোঁজ নেন। চিকিৎসা নিশ্চিতে নির্দেশনা দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।