দেশে এখন
0

সংকট দীর্ঘায়িত হলে প্রভাব পড়বে পাহাড়ের অর্থনীতিতে

রাঙামাটি

পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাত ঘিরে টানা তিন দিনের অবরোধে ভেঙে পড়েছে পাহাড়ের অর্থনীতি আর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। টানা অবরোধে রোজগার হারিয়েছেন পাহাড়ের প্রান্তিক চাষি, ছোট দোকানি থেকে পরিবহন কিংবা হোটেল-মোটেল মালিকরা। এ সংকট দীর্ঘায়িত হলে প্রভাব পড়বে পাহাড়ের পুরো অর্থনীতিতে।

পাহাড়ে জুম চাষের মাধ্যমে ধান চাষ করেছে পাহাড়িরা। ছবি: এখন টিভি

জুমের পাকা সোনালি ধানে রঙিন হয়েছে সবুজ পাহাড়। সে ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত পাহাড়িরা। সোনালি ধান ঘরে আনা অনেকটা উৎসবের বার্তা নিয়ে আসে তিন পার্বত্য জেলায়। অথচ শান্ত পাহাড়ে এখন হাসি নেই কারও মাঝে।

দীঘিনালার আগুনের উত্তাপ ছড়িয়েছে পাহাড় ও সমতলে। আগুনের ধ্বংসাবশেষ থেকে শেষ সম্বল হাতড়ে বেড়াচ্ছেন পাহাড়ি ও বাঙালি ব্যবসায়ীরা। কেউ কেউ চেষ্টা করছেন ঘুরে দাঁড়ানোর।

শুধু দীঘিনালার এক বাজারেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতাধিক দোকান। যেখানে ক্ষতির পরিমাণ ৫০ লাখ টাকারও বেশি।

স্থানীয় একজন বলেন, 'আমাদের তো আগেও দোকান পুড়ে গেছে। এইরকম ক্ষয়-ক্ষতি নিয়ে এখন কীভাবে দাঁড়াবো? পরিস্থিতি ভালো না।'

বাজার থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে বাঙালি পাড়া। সবার চোখেমুখেই উদ্বেগ। বন্ধ দোকানপাট আর নিস্তব্ধ সড়ক জানান দেয় চাপা আতঙ্কের। সবার মনে একই প্রশ্ন আগামী দিনে পাহাড় কি শান্ত হবে? নাকি এ আগুনে ছাই হবে দশকের পর দশক একসাথে বসবাসের ঐতিহ্য।

এমন অবস্থায় চলা অবরোধে ভেঙে পড়েছে তিন পার্বত্য জেলার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। পাহাড়ে চাষ হওয়া লাখ লাখ টাকার ফল, ফসল যাচ্ছে না বাজারে। প্রান্তিক চাষি থেকে, ছোট দোকানি বা উদ্যোক্তা, সবার আয়ই বন্ধ।

একজন দোকানদার বলেন, 'পাহাড়ে যেতে পারে না। মানুষের ভেতরে আতঙ্ক কাজ করছে। বেচাবিক্রি একেবারেই কম। আগে যেখানে ২০০ বা ৩০০ কেজি মাছ বিক্রি হতো বাজারে সবমিলে, সেখানে ঝামেলার পর এখন অনেক কমে গেছে।'

খাগড়াছড়ি, দিঘীনালা হয়ে অপরূপ সৌন্দর্যের সাজেক দেখতে প্রতিদিনই ছুটে যান হাজারও পর্যটক। বলা যায় এ জেলার শতাধিক হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট বা পরিবহন সবই পর্যটন নির্ভর। সংঘাতের জেরে খাগড়াছড়ি এখন পর্যটক শূন্য। সবমিলিয়ে দিনে শুধু পর্যটন খাতেই ক্ষতির পরিমাণ দেড় কোটি টাকারও বেশি। এদিকে সাজেক গিয়ে আটকা পড়েছেন অন্তত ৮০০ পর্যটক। খাদ্য সংকটে পড়েছেন তারা।

খাগড়াছড়ি হোটেল মালিক সমিতির অর্থ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, 'আবাসিক হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট সবকিছুই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তারা নাকি ঠিকমতো পানিও পাচ্ছে না। এ রকম চলতে থাকলে আমাদের সংকট আরও দীর্ঘ হবে। পাহাড়ে চলাচল করা কঠিন হয়ে যাবে।'

টানা অবরোধে স্থবির তিন জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা। যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ বন্ধ থাকার প্রভাব পড়েছে পুরো অর্থনীতিতে। একদিকে উৎপাদিত ফসল যেমন বিক্রি করা যাচ্ছে না, তেমনি সমতল থেকেও আনা যাচ্ছে না কোনো পণ্য। এতে গত তিন দিনে শুধু খাগড়াছড়িতেই ক্ষতির পরিমাণ অন্তত দেড় কোটি টাকা।

খাগড়াছড়ি জীপ মালিক সমিতির সভাপতি মফিজুর রহমান বলেন, 'এখানে পরিবহণ সেক্টর যেমন হুমকির মুখে, তেমনি এর পাশাপাশি হোটেল, রেস্তোরাঁ সবকিছুই ক্ষতির সম্মুখীন। আমাদের হিসেবে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে।'

আগুন বা দাঙ্গার ঘটনায় পাহাড়ে যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা হয়তো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। কিন্তু হিংসার এ আগুনে যে সম্প্রীতির ক্ষয়ক্ষতি হলো সেটি কি আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে? ক্ষতিগ্রস্তরা দাবি করছেন যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের অবশ্যই উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাদের বিচারের মুখোমুখি করা না হলে আগামী দিনে পুরো পাহাড়কে অস্থির করে তুলতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

এসএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর