বসতভিটার লণ্ডভণ্ড অবস্থা দেখাচ্ছেন বিলকিস বেগম। ছবি: এখন টিভি
আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরে বসতভিটার লণ্ডভণ্ড অবস্থা দেখে দিশেহারা কুমিল্লা বুড়িচং বেড়াজাল গ্রামের বাসিন্দা বিলকিস বেগম। উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যা কেড়ে নিয়েছে তার সর্বস্ব। একটি ঘরের কঙ্কাল দাঁড়িয়ে থাকলেও অন্যটি মিশে গেছে মাটির সঙ্গে। বিলকিস বেগমের ঠাঁই এখন গোমতীর বাঁধে।
বিলকিস বেগম বলেন, 'এখানে আর কিছুই নাই । যা ছিল সব নষ্ট হয়ে গেছে। রান্নাঘরসহ সব জিনিসপত্র ভেসে গেছে।'
দিন যতই যাচ্ছে, বন্যা পরবর্তী ক্ষতচিহ্ন স্পষ্ট হচ্ছে কুমিল্লার দুর্গত অঞ্চলে। পানি নামা অব্যাহত থাকলেও, এখনও তলিয়ে অনেক ঘরবাড়ি ও সড়ক। তাই বেশির ভাগেরই ফেরা হয়নি নিজ ঘরে। ত্রাণ, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের সংকট। তলিয়ে যাওয়া জনপদে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের। ভয়াবহ বন্যায় ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে মানুষের এখন সব হারানোর হাহাকার।
এবারের বন্যায় কুমিল্লার বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট, চৌদ্দগ্রামসহ ১৪ উপজেলা প্লাবিত হলেও ভয়ানক ক্ষতির মুখে বুড়িচং উপজেলার বুরবুড়িয়া ও বেড়াজাল গ্রামের কয়েকশ' পরিবার। গোমতীর বাঁধ ভেঙ্গে উজানের ঢল সরাসরি আঘাত হানে তাদের ঘরবাড়িতে। বানের পানিতে ভেসে যায় আসবাবপত্র, গৃহপালিত হাঁস-মুরগি, গবাদি পশু ও ভিটেমাটি। সর্বস্ব হারানো দুর্গতরা এখন বন্যার ধকল কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় চান একটু রাষ্ট্রীয় সহায়তা।
বন্যাদুর্গতদের মধ্যে একজন বলেন, 'ভাই আমার ছেলে-মেয়ে নিয়ে যাতে থাকতে পারি সেই ছায়ার ব্যবস্থাটা একটু করে দেন। আপনাদের কাছে এইটাই আমার অনুরোধ আর কিছু না।'
একই অবস্থা অনেকের। তাদের অনেকেরই আবার আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়া থাকার আর কোনো জায়গা নেই।
ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরের প্রাথমিক তালিকা হয়েছে। ৮ হাজার ৬২৫টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৭৪ হাজার ৮১টি ঘর। সবমিলিয়ে ৮২ হাজার ৭০৬ পরিবারের বসতঘর বিধ্বস্ত স্মরণকালের এ ভয়াবহ বন্যায়।
ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে দ্রুতই পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবেদ আলী। বলেন, 'সর্বমোট ৮২ হাজার ৭০৬ টা পরিবারের ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমরা তাদের পুর্নবাসনের লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছি।আমরা বিভিন্ন দাতা সংস্থার সাথে কথা বলেছি। সরকারের কাছে আমরা প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। আমরা আশা করছি খুব দ্রুতই পুর্নবাসনের দিকে যাবো।'
বন্যায় কুমিল্লায় ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবার বসত বাড়ির পাশাপাশি হারিয়েছেন মাঠের ফসল, পুকুর-ঘেরের মাছসহ গৃহপালিত পশু-পাখি।