ফেনীর বাঁশপাড়া কোয়ার্টারের দুর্গা মন্দিরে গেল ৫ আগস্টে হামলা ও ভাঙচুরের খবর ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। যদিও ঘটনাস্থলে গিয়ে মিল পাওয়া যায় না বাস্তবতার সাথে।
স্থানীয়রা বলছেন, একটি মহল সেদিন গুজব ছড়িয়েছে। ফেনী জেলায় মোট ১৪৩টি মন্দির, একটি খ্রিষ্টান চার্চ ও তিনটি বৌদ্ধ বিহার রয়েছে। এসব স্থানে পাহারা বসিয়েছেন শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক দলের কর্মীরা।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি শুকদেব নাথ তপন বলেন, 'বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে কথা হয়েছে। তারা পুরো গ্রামে ও বিভিন্ন মন্দিরে পাহারা দিচ্ছে। আর এর মধ্যে ফেনী জেলায় কোথাও কোনো মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেনি।'
ফেনী জ্ঞানরত্ন বৌদ্ধ বিহারের ভিক্ষু উপাধ্যাক্ষ ভদন্ত স্মীতি রত্ন বলেন, 'ফেনীতে কোথাও বৌদ্ধদের ওপরে কোনো সমস্যা বা হামলা হয়নি।'
ফেনী খ্রিষ্টান চার্চের পালক দিলু সরকার বলেন, 'প্রশাসনও আমাদের দেখছে এখন। তারাও আমাদের প্রতিলক্ষ্য রাখছে বলে আমরা নির্ভয়ে আছি।'
এদিকে নোয়াখালীর কবিরহাট, হাতিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলায় সংখ্যালঘুদের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ৫টি হামলার তালিকা প্রকাশ করেছে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। তবে এ জেলার কোথাও উপাসনালয়ে হামলা হয়নি। এছাড়া খাগড়াছড়িতে কিছু সংখ্যালঘুর বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটলেও স্বাভাবিক রয়েছে রাঙামাটি ও বান্দরবানের পরিস্থিতি।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, 'আমাদের নোয়াখালীতে এখনও এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাদের সাথে আমি কথা বলেছি, বৈঠক করেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় এলাকার মানুষরা নিজেরাও পাহারা দিচ্ছে।'
অন্যদিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পূজা উদযাপন পরিষদের দুই নেতার বাড়িতে হামলা হয়েছে। মূলত পূর্ব শত্রুতার জেরে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদ্যুৎ রঞ্জন নাগ বলে, 'ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে আমার জানান নেই। অল্প যে কয়টা হয়েছে সেটা পূর্বশত্রুতার জের থেকে হয়েছে।'
দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের জেলা কক্সবাজারে এখন পর্যন্ত কোনো সাম্প্রদায়িক হামলার খবর মেলেনি। তবে, বিভিন্ন স্থানে হামলার খবরে আতঙ্কিত এখানকার সংখ্যালঘুরা। তাই পালাক্রমে রাত জেগে ধর্মীয় উপাসনালয় পাহারা দিচ্ছেন তারা। সাথে যোগ দিয়েছেন স্থানীয়রাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
কক্সবাজার সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট বাপ্পি শর্মা বলেন, 'বর্তমানে আমাদের প্রতিটি পাড়ায়, মন্দিরে প্রতিনিয়ত বিএনপি ও জামায়াতের প্রতিনিধিরা আমাদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। তারা আমাদের সাথে থেকে জায়গায় জায়গায় পাহারা দিয়েছেন।'
গেল ৫ আগস্ট থেকে চট্টগ্রাম নগরী, রাউজান, বাঁশখালীসহ বিভিন্ন উপজেলায় সংখ্যালঘুদের বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়ে মোট ১৬টি হামলার তালিকা প্রকাশ করেছে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। তবে, সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজবের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। এর মধ্যে মহানগরের দুই নম্বর গেট এলাকায় সনাতন ধর্মের একজনের বাসায় হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এসময় বাড়ির মানুষদের মারধর ও বাসায় ভাঙচুর চালায়। ভুক্তভোগীরা জানান, জায়গা সম্পত্তি নিয়ে আত্মীয়দের সাথে বিবাদের জেরে এসব ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী দেবজানী দেবী বলেন, 'এট আমার মায়ের পৈতৃক সম্পত্তি। এই জায়গা নিয়ে আত্মীয়দের সাথে সমস্যা ছিল।'
গেল ৬ আগস্ট থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী ও সচেতন মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাশে দাঁড়ানোয় সাহস ও স্বস্তি ফিরেছে সংখ্যালঘুদের মাঝে, কুড়িয়েছে প্রশংসাও।