সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা এই উপজেলায় ৩টি পৃথক দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত। এর চারপাশে নদীতে লবণ থাকায় খরা মৌসুমে সুপেয় পানির চরম সংকট দেখা দেয়। প্রতি বছরের মত এবারও উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের সর্বত্রই সুপেয় পানি জলের চরম সংকট দেখা দেয়। টিউবওয়েল ছাড়াও পুকুর, খাল ও নদী উপকূলীয় উপজেলার মানুষের সুপেয় পানির আরেকটি উৎস। আগ্রাসী লবণ এখানকার মানুষের এসব উৎসও নষ্ট করে দিচ্ছে। খুলনার দাকোপ উপজেলায় শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই সুপেয় পানি চরম সংকট দেখা দেয়। ফলে খোলা পানি বিক্রির দোকানে ছুটতে হয় মানুষকে। কিছু লোক আবার দূরদূরান্ত থেকেও সংগ্রহ করে পানি। আবার বাধ্য হয়েও কিছু লোক ডোবা-নালার পানিও পান করছেন।
বর্তমানে ২ লাখেরও বেশী মানুষ সুপেয় পানির জন্য হাহাকার করছেন। এখানে কোথাও গভীর নলকূপ সফল না হওয়ায় রয়েছে অগভীর নলকূপ যার অধিকাংশ অকেজো। আবার কোন কোন নলকূপের পানিতে লবণ, আর্সেনিকযুক্ত এবং অতিরিক্ত আয়রন। তবে সারা বছরের সুপেয় পানির সংকট মেটাতে উপকূলের মানুষের সর্বশেষ ভরসা বর্ষা মৌসুম। এই মৌসুমে ট্যাংকিতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে রাখা হয় দাকোপের গ্রামের ঘরে ঘরে। কিন্তু এই সংরক্ষিত পানিও পর্যাপ্ত নয়।
উপকূলীয় এলাকা দাকোপের মানুষের সুপেয় পানির সংকট কাটাতে স্থাপন করা হয় পানি সংরক্ষণ প্রকল্পটি। কিন্তু কয়েকমাস যেতে না যেতেই এর কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ে। পুনরায় এটি চালু করার দাবি এলাকাবাসীর।
সুপেয় পানির সংকট কাটাতে উপকূলীয় এলাকায় পানির নতুন নতুন আধার সৃষ্টি এবং নষ্ট পুকুরগুলোতে মিষ্টি পানি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন পরিবেশবিদরা।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড.মো:মুজিবর রহমান জানান, উপকূলের অন্যতম সমস্যা লবণাক্ততা। এই লবণাক্ততা দূরীকরণের জন্য পাইলট প্রকল্প এরই মাঝে নেয়া হয়েছে'।
অন্যদিকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সুপেয় পানির সরবরাহের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণের কথা জানান।
খুলনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো:মঈনুল হাসান জানান, 'লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়া, নদীর নাব্যতা কমে যাওয়াসহ নানা কারণে লবণাক্ততা বেড়ে গেছে। উৎস তৈরি করে পানি সংরক্ষণ করা গেলে খরা মৌসুমে পানির সমস্যা দূর করা যেত'।
সুপেয় পানির সংকট দূর করতে স্বাধীনতার পর থেকেই উপকূলে বিভিন্ন এনজিও কাজ করছে। তারা এখানে পিএইচ এফ, রিভারস্ অসমোসিসসহ বিভিন্ন পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটিয়েছে। কিন্তু মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে বেসরকারি সংস্থার সেই প্রকল্পগুলো আর চলেনি। এসব এলাকায় শত শত কোটি টাকা অপচয়ই হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।