দেশে এখন
0

ডাকাত ধরতে নির্ঘুম রাত রাজধানীবাসীর

ডাকাত আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করছেন রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ এলাকার মানুষ। তবে, কিছু স্থানে ডাকাতির খবর পাওয়া গেলেও অধিকাংশ স্থানে গুজবে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশের অনুপস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। থানার লুট করা অস্ত্র দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা না নিলে দুর্ভোগে পড়তে হবে সাধারণ মানুষদের।

ফেসবুক লাইভে এসে ডাকাতের আক্রমণ প্রতিরোধে সাধারণ মানুষের সাহায্য চেয়েছেন এক নারী। ফোন দিয়েও খুঁজে পাশে পাচ্ছেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পাবেনই বা কি করে এখনও ঠিকঠাক করে ভীতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি পুলিশ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী না থাকায় ফাঁকা মাঠে ডাকাতের উপদ্রব থামাতে দায়িত্ব হাতে তুলে নিয়েছেন সাধারণ মানুষ। তাই এলাকায় এলাকায় লাঠি ও দেশিয় অস্ত্রহাতে পাহারা বসিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

মসজিদের মাইকে ডেকেও সতর্ক করা হচ্ছে অনেক সময়। আহ্বান করা হাচ্ছ দুর্বৃত্তদের প্রতিহত করান জন্য। কোথাও কোথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শূন্য রাজধানীতে নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করার জন্যই জমি দখল করা হচ্ছে। আর এই জমি বা ফ্ল্যাট দখলকে কেউ কেউ ডাকাতি বলে চালিয়ে দিচ্ছেন।

দিনের বেলার কি অবস্থা? দেখতে বাসাবো এলাকার নন্দিপাড়াতে যায় এখন টিভির প্রতিনিধি দল।

স্থানীয় একজন বলেন, 'কাল রাতে এখানে একটা ডাকাতি হয়েছে। আমাদের পাশির গলিতে ডাকাতি হচ্ছিল, আমরা ভয় পাইছি। পরে পাশের মসজিদ থেকে সবাইকে ডাকা হলে সবাই নেমে যায়।'

স্থানীয় অন্য এক বাসিন্দা বলেন, 'আমার ঘরে চারটা তালা মেরে বাইরে বসে পাহারা দিছি। এলাকার সবাই মিলে একসাথে পাহারা দিয়েছি। রাতে ঘুম হইলেও টেনশন হয়, কারণ দেশের যে পরিস্থিতি এভাবে তো মানুষ বাঁচতে পারে না।'

এই এলাকার অধিকাংশ মানুষই শুনেছেন ডাকাতের কথা। প্রতিহত করার জন্য রাস্তায়ও নেমেছেন, দিয়েছেন পাহারা। তবে, চোখে দেখেনি অনেকেই, তবুও আতঙ্ক তাদের মাঝে।

স্থানীয় একজন বলেন, 'এলাকায় বেশ জোড়ে জোড়ে মাইকিং হচ্ছিল। তারপর আমরা লাঠিসোঠা নিয়ে আমরা রাস্তায় নেমে আসি। এরমধ্যেই নাকি ডাকাতি হয়ে গেছে, পরে শুনি যে ঢাকা হোটেলেও ডাকাতি হয়েছে।'

এমন আতঙ্ক অধিকাংশ এলাকাতেই। সাধারণ মানুষ বলছে পুলিশের সহায়তায় তারা পাশে থাকবেন। পুলিশকে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক হাতিয়ার না হওয়ার বিষয়ে আহ্বান জানান তারা।

স্থানীয় বলেন, 'পুলিশ আগের মতো মানুষকে হয়রানি করবে না। আগের মতো ধরে নিয়ে গিয়ে আটকিয়েও রাখতে পারবে না। সবাই সবার মতো মত প্রকাশ করতে পারবে। কোথায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কী অবস্থা এটা পুলিশ ছাড়া আর কেউ জানে না।'

কেউ কেউ থানা থেকে লুট করা অস্ত্র ফেরত দিতে এলাকাবাসীদের চাপও দিচ্ছেন।

ওয়ারীর একজন বাসিন্দা বলেন, 'ওয়ারী থানায় বসার মতো অবস্থা ছিল না। তাদের অস্ত্র সবাই নিয়ে গেছে। তার মধ্যে কয়েকটি অস্ত্র দিয়ে গিয়েছে। আমরা বলেছি যে যাদের কাছে অস্ত্র আছে তারা যেন অস্ত্রগুলো নিজে থেকে দিয়ে দেয়।'

রাজধানীর কিছু কিছু থানায় পুলিশ ফিরে আসলেও থানার মধ্যে কাজ করার মতো অবস্থা নেই এতটুকুও। বিক্ষুব্ধ জনতা পুড়িয়ে দিয়েছে সব, লুট করে নিয়েছে অনেক অস্ত্র। যাদের থানায় হামলা হয়নি তারাও বলছে জনগণকে পাশে নিয়ে কাজ করতে চায় তারা।

কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহীনুর রহমান বলেন, 'সকল অফিসার ফোর্স এখনও হাজির হয়নি। এরপর আমাদের অস্ত্রগুলো গোছানোর বিষয় আছে, অফিস আদালত গোছানোর বিষয় আছে।'

ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানে আলম মুনশি বলেন, 'এখানে কাজকর্ম করার মতো একটা কলমও নেই। কোথাও বসার কোনো জায়গা নেই, অস্ত্রও নেই, সব নিয়ে গেছে। তারপরও জনগণের ক্রাইসিস দেখে আমরা থানায় এসেছি।'

লুট হওয়া অস্ত্র নিয়ে আতঙ্কিত অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। বলছে দ্রুত অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া উচিত নতুন সরকারের। সাথে থানায় পুলিশের অবস্থান নিশ্চিত করতে পারলেই কমবে ডাকাতি।

সাবেক পুলিশ প্রধান নুর মোহাম্মদ বলেন, 'এটা একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। এখানে অনেক কিছুই হতে পারে। নানা শ্রেণিপেশার মানুষের ইনভলভমেন্ট আছে এখানে। অস্ত্র যেগুলো লুট হয়েছে সেগুলো কীভাবে ফিরে আনা যায়, পুলিশের নরমাল কার্যক্রম ফিরিয়ে আনতে নতুন সরকারের বসে ঠিক করতে হবে।'

ডাকাতি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে কি না তাও খতিয়ে দেখার দাবি এই অপরাধ বিশেষজ্ঞের।

tech