শিক্ষা
দেশে এখন
0

বার বার এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোয় পরীক্ষার্থীদের ওপর বিরূপ প্রভাব

চলমান এইচএসসি ও সমমানের কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা হলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় বাকি পরীক্ষাগুলো চার ধাপে স্থগিত হয়ে পিছিয়েছে প্রায় এক মাস। চারপাশের পরিস্থিতি বিরূপ প্রভাব ফেলছে পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ও মানসিকতায়। সঙ্গে পিছিয়ে থাকা একাডেমিক ক্যালেন্ডার আরও পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায়, পরীক্ষার্থীর প্রতি পরিবারকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাইশা মালিহা তার জানালার গ্রীল ধরে যে আকাশ কিংবা বাইরের পৃথিবীর ছবি দেখে, তার রঙ এখন কেমন? শখের পাখির সাথে সে এখন কোন গান গায়? পড়ার টেবিল ছেড়ে যেন সে পার করছে অলস-উদাস সময়। কখনও জানালায়, কখনও পাখির কিচিরমিচির শব্দের সাথে, কখনও টিভি পর্দা কিংবা স্মার্ট ফোনে চোখ রেখে সময় ক্ষেপণ করেন তিনি। বিজ্ঞান বিভাগের এই শিক্ষার্থীর এইচএসসি পরীক্ষার সাতটি পত্র শেষ হলেও বাকি পরীক্ষা ৪ ধাপে প্রায় ১ মাস পিছিয়েছে। এই ছন্দ পতনে এখন কেমন আছে মালিহা?

মাইশা বলেন, 'নিজের মনকে এক জায়গায় স্থির রাখতে পারছি না। চারদিকে যা দেখছি, নিউজ দেখছি, এই নিউজগুলো দেখে অনেক খারাপ লাগছে। বুঝতে পারছি যে কোনো শিক্ষার্থী আসলে পড়ালেখা করতে পারছে না। যখন একটা ট্র্যাকে থেকে কাজ করি, তখন একটা বাধা আসলে আগের মতো হয় না। অনেকে বলছে যে, সময় পাইছো, যেগুলো গ্যাপ ছিল সেগুলো পূরণ করো, কিন্তু এটা আসলে হয় না।'

শুধু মাইশা মালিহা নয়, অন্য এইচএসসি পরীক্ষার্থীদেরও একই অবস্থা। জীবনের এমন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা চলাকালে চারপাশের পরিস্থিতি প্রভাব ফেলছে পড়াশোনায়। অনেকের দুশ্চিন্তা এইচএসসি পরবর্তী উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি হওয়া নিয়েও।

একজন পরীক্ষার্থী বলেন, 'একে তো আমরা অনেক পেছানো। তারপর আমাদের এইচএসসি পরীক্ষা যেসময়ে শুরু হওয়ার কথা সেসময়ে হচ্ছে না। আমরা সময় কম পাচ্ছি। তার মধ্যে এরপর আবার ভর্তি পরীক্ষা। এই বন্ধ থাকায় আমাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।'

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সমাবেশ, বাংলা ব্লকেড ও কমপ্লিট শাটডাউনসহ পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশজুড়ে কারফিউ জাড়ি করা হয়েছে। এ অবস্থায় বন্ধ ঘোষণা হয় দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও চার ধাপে স্থগিত হয়ে পিছিয়েছে প্রায় এক মাস। এতে পরীক্ষার্থীদের কতটা ক্ষতি হচ্ছে আর পিছিয়ে থাকা একাডেমিক ক্যালেন্ডারও প্রভাব পড়বে প্রায় কতটা?

এ বছর ১১টি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ১৪ লাখ ৬১ হাজার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আছে৷ মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলমান পরিস্থিতি এবং পরীক্ষা পেছানোয় মানসিক চাপে পড়ছেন তারা। বিভিন্ন উপায়ে পরিবারকে তাদের পাশে থাকার কথা বলছেন তিনি।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. আহমেদ হেলাল বলেন, 'বার বার এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো পরীক্ষাদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। আমরা অভিভাবকদের প্রতি পরামর্শ দেবো এই মুহূর্তে সন্তানকে গুণগত সময় দেয়ার জন্য। তাদের সাথে যেন পারিবারিকভাবে আলাপ আলোচনা করেন, কথাবার্তা বলেন। রুটিন করে পড়ালেখার নিয়ম ও ধারাবাহিকতাকে যেন তারা নষ্ট হতে না দেন। পরীক্ষারাও যেন তাদের মনের ভেতর থাকা ক্ষোভ পরিবারের সদস্য ও শিক্ষকদের সাথে ভাগ করে নেন।'

মহামারি করোনায় একাডেমিক ক্যালেন্ডারে যে ওলটপালট হয়েছে, তা এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। এরইমধ্যে এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয় ৩০ জুনে। আর বন্যার কারণে সিলেট অঞ্চলের পরীক্ষার্থীদের শুরু হয় ১০ দিন পরে ৯ জুলাই। চলমান পরিস্থিতিতে স্থগিত থাকা পরীক্ষাগুলো শুরু হবে ১১ আগস্ট থেকে শুরু হবে নতুন সময়সূচিতে। এই এক মাস একাডেমিক ক্যালেন্ডারে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। তারপরও শিক্ষার্থীদের বিচলিত না হবার আহ্বান ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফের।

তিনি বলেন, 'মনে রাখতে হবে, উচ্চ মাধ্যমিকের এই ফলাফলটা একজন শিক্ষার্থীর জীবনের সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য তারা বিচলিত না হয়ে তাদের পড়াশোনা করে অধ্যায়নকে বাড়িয়ে দেবে। অভিভাবকদের আমার অনুরোধ থাকবে, তারা বাচ্চাদের সাপোর্ট দেবেন, আমরা শিক্ষকরাও সাপোর্ট দেবো।'

এদিকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলছেন, বর্তমান অবস্থায় পরীক্ষা নেয়ার মতো পরিস্থিতি না থাকায় পেছাতে বাধ্য হয়েছে সরকার।

তিনি বলেন, 'মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আমরা এই ১১ আগস্ট থেকে পরীক্ষা নেয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করছি। যেন শিক্ষার্থীরা তাদের মানসিক সমস্যাটাকে রিকভারি করে নতুন করে প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারে।'

শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার হলে ফেরাতে যে পরিবেশ প্রয়োজন তা তৈরি করার জন্য বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

এসএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর