দেশে এখন
0

শোকাবহ আগস্টের প্রথম দিন আজ

শুরু হলো শোকের মাস আগস্ট। এই মাসে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারকে। আবার এ মাসেই আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন ২৪ জন। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বকে সরিয়ে দিতে ঘাতকরা বারবার এ মাসকেই বেছে নিয়েছে। তাই যেকোনো অপতৎপড়তা রুখতে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ।

স্বাধীনতার আঁতুরঘর বলে খ্যাত ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঘোর অন্ধকার নেমে আসে আগস্টের এক রাতে। সুবহে সাদিকের আজানের আগে ভেসে আসে বুলেটের শব্দ।

রাষ্ট্রপতিকে হত্যার উদ্দেশ্যে সেনানিবাস থেকে বের হয় গোলাবারুদ বোঝাই ট্যাঙ্ক। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, এই বাড়িতে থাকা বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে একদল সৈনিক। ১৮টি গুলি ঝাঁঝরা করে দেয় বঙ্গবন্ধুর বুক। সিঁড়িতে পড়ে থাকে স্বাধীনতার মহানায়কের নিথর দেহ।

অথচ তখন বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম নেয়া নতুন দেশটিকে ঢেলে সাজাচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

সিনিয়র সাংবাদিক অজয় দাস গুপ্ত বলেন, 'খাদ্য ও কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর কর্মসূচি নিয়েছিলেন, শিল্প কলকারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ব্যাংকিং সেক্টর যেন দাঁড়ায় সেটার জন্য কাজ করেছিলেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ওই সময় ১০০ এরও বেশি দেশের স্বীকৃতি পেয়েছিল। শেখ মুজিব যে দেশেই গিয়েছেন স্বাধীনতা মুক্তির আন্দোলন হিসেবে সম্মানিত হয়েছেন।'

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে মাথাপিছু আয় ৯৩ ডলার থেকে ৪ বছরের মাথায় বেড়ে দাঁড়ায় ২৭৩ ডলার। কিন্তু ১৯৭৭ সালে মাথাপিছু আয় কমে নেমে আসে ১২৮ মার্কিন ডলারে। অন্যদিকে ১৯৭৫ সালে ১২ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকার জাতীয় আয় ২ বছর পর বৃদ্ধি না পেয়ে বরং কমে দাঁড়ায় ১১ হাজার ৬০০ কোটি টাকায়।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরতে সময় লাগে ১৫ বছর। এ সময় বেড়ে যায় রাজনৈতিক দ্বিধা বিভক্তি, অর্থনৈতিকভাবেও পিছিয়ে যায় বাংলাদেশ।

অজয় দাস গুপ্ত বলেন, 'মুজিবকে ক্ষমতা থেকে সরালে দেশ উন্নতির দিকে যাবে, অগ্রগতি হবে, বাস্তবে কিন্তু সেটি হয়নি। রাজনৈতিক অস্থিরতা চলে দেশে, অনেক মানুষ কারাগারে থাকে। অনেক লোক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বলে কিছু নেই। অর্থনীতিতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেনি।'

৭৫-এ বিদেশে থাকায় বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা। ১৯৮১ সালে দেশে ফেরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন শেখ হাসিনা। সেই থেকে নানা আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় থাকেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। বারবার মৃত্যুর কবল থেকে বেঁচে ফিরেছেন তিনি। এমনি এক গ্রেনেড হামলা হয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। গুলিস্তানে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার সমাবেশে অতর্কিত হামলায় প্রাণ হারান ২৪ জন।

দেশবাসী আগস্টের আরেক ভয়ঙ্কর রূপ দেখেছিল ২০০৫ সালের ১৭ই অগস্ট। সেদিন ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলায় ২ জন নিহত, আর আহত হন বহু মানুষ।

বছর ঘুরে আসা আগস্ট মনে করিয়ে দেয় রাজনীতির এসব ভীতিকর ঘটনা। এবারও সতর্ক আছে আওয়ামী লীগ।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী যে শক্তি, সেই একই শক্তির ভিন্নরূপ নিয়ে আজ শেখ হাসিনাকে টার্গেট করে তারা সহিংসতা পরিচালনা করছে। কেন যেন এই আগস্ট মাসকেই তারা বেছে নেয়। পুরোনো সেই শকুনেরা যেন ছোবল মারতে না পারে, সেজন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে।'

শোক থেকে শক্তি সঞ্চয় করে আগামীর পথচলা হবে আরও মসৃণ এমনটাই প্রত্যাশা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

এসএস