দেশে এখন
0

শিক্ষার্থীদের মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচিতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ

সারাদেশে মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের চাওয়া ৯ দফা দাবির বাস্তবায়ন। আজ (বুধবার, ৩১ জুলাই) ঢাকাসহ দেশের সকল মহানগর ও জেলা শহরের আদালত ঘিরে এ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। এতে অংশ নেন শিক্ষক ও আইনজীবীরাও। চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, সিলেট, বগুড়া ও নরসিংদীতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। ঘটে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা।

সারাদেশে সহিংসতা হামলা-মামলার প্রতিবাদ, জাতিসংঘ কর্তৃক তদন্তপূর্বক বিচারের দাবি ও ছাত্রসমাজের ৯ দফা আদায়ের লক্ষ্যে দেশের সব আদালত, ক্যাম্পাস ও রাজপথে বুধবার মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

এতে অংশ নিতে ঢাকার শিক্ষার্থীরা দুপুর বারোটার দিকে হাইকোর্ট এলাকায় আসতে শুরু করে। শুরুতেই বাধা দিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা হাইকোর্টের দিকে রওনা দিলে মাঝপথে তাদেরও আটকে দেয় পুলিশ। বাধার মুখে শিশু একাডেমির সামনে অবস্থান নেন তারা।

একজন শিক্ষার্থী বলেন, 'আজকে আমরা এখানে এসেছি শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করার জন্য, বিচার বিভাগকে শান্তিপূর্ণভাবে জানান দেয়ার জন্য যে আমরা মার্চ ফর জাস্টিসের জন্য এখানে এসেছি। কিন্তু তারা শিক্ষার্থীদের কোনোভাবেই আসতে দিচ্ছে না।'

এর পরই বিক্ষোভে অংশ নেন আইনজীবীরা। শিক্ষার্থীদের সংহতি জানিয়ে মিছিল করে তারা। এসময় শিক্ষার্থীদের আটক করে নিয়ে যাওয়ার পথে আটকে দেয়া হয় একটি পুলিশ ভ্যান।

একজন আইনজীবী বলেন, 'শুধু তারা ছাত্র, এই পরিচয়ে তাদের তুলে নেয়া হয়েছে। একজন মানুষ যখন আক্রান্ত হন শুধু তার পরিচয়ের কারণে, তার কোনো কর্মকাণ্ডের জন্য নয়। সেটাকে ইংরেজিতে জেনোসাইড বলে, গণহত্যা বলা হয়।'

দুপুর ১টা নাগাদ বাধা ভেঙ্গে শিক্ষার্থী-আইনজীবী মিলে ঢুকে পড়ে হাইকোর্ট চত্বরে। আর শিশু একাডেমির সামনে অবস্থান নেয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও বাধা ভেঙ্গে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে।

শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করে ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত কমিটির জন্য আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি করেন। এ সময় তিনি সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়ী করে সমালোচনা করেন।

এদিকে নিম্ন আদালত ও দায়রা জজ আদালত এলাকায়ও সকাল থেকে কড়া নিরাপত্তায় রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে দুপুরে দেশব্যাপী সহিংসতার প্রতিবাদে মিছিল করে আইনজীবীরা।

আটককৃতদের স্বজনরা এসে জড়ো হন সিএমএম কোর্টে। নিরপরাধ দাবি করেন তারা।

ঢাকার বাইরেও দিনভর স্লোগানমুখর ছিল সড়ক-মহাসড়ক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির টহল টিম। শিক্ষার্থীরা আদালত চত্বরে যাওয়ার চেষ্টা করলে বাধা দেয় পুলিশ।

প্রতিবাদে ইটপাটকেল ছোড়ে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বগুড়া ও নরসিংদীতে পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

একজন শিক্ষার্থী বলেন, 'শান্তিপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিচ্ছিল। তারপরও তাদের ওপর যেমন ন্যাক্কারজনকভাবে লাঠিচার্জ করা হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার তীব্র নিন্দা জানাই। অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রছাত্রীদের নিঃশর্তভাবে মুক্তির দাবি জানাই।'

সহিংসতার প্রতিবাদসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ৬ সমন্বয়কের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানান সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

একজন শিক্ষার্থী বলেন, 'এটা কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন না। তাই একটা নেতা বা সমন্বয়কের জন্য এ আন্দোলন থেমে থাকবে না। আমরা জানি যে, কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের ডিবি অফিসে জিম্মি করে তাদের দিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই প্রত্যাহার মানি না।'

এছাড়া রাজশাহী, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, হবিগঞ্জ, দিনাজপুর ও টাঙ্গাইলসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার মুখেও কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করেন প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এসএস