দেশে এখন
0

কোটা পদ্ধতি সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি

মেধার ভিত্তিতে ৯৩%, বাকি ৭% কোটায়

আপিল বিভাগের রায়ের ভিত্তিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। আজ (মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই) গুলশানে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে সাংবাদিকদের বিস্তারিত তুলে ধরেন। এসময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। এছাড়া জনপ্রশাসন, আইন ও বিচার বিভাগের সচিবরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

এখন থেকে সরকারি বেসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরির সব গ্রেডে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে ৯৩ শতাংশ। আর বাকি ৭ শতাংশ নিয়োগ হবে কোটার ভিত্তিতে। আপিল বিভাগের রায়ের ভিত্তিতে এ কোটা পদ্ধতি নির্ধারণ করে আজ প্রজ্ঞাপন জারি করলো সরকার।

সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন এ প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল করা হলো। রায়ের কোনো অংশ পরিবর্তন করতে পারবে না সরকার। নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে।’

এ সময় আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়ার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘সহিংসতায় যেসব সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার বিষয়ে সরকার দেখভাল করবে।’

শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রসঙ্গে আনিসুল হক বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যেসব শিক্ষার্থী জড়িত ছিলেন তাদের ব্যাপারে কোনো মামলা হয়ে থাকলে সেগুলো আমরা অবশ্যই দেখবো।’ এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের কারো নামে মামলা হলে তা জানাতে আহ্বান জানান।

এ সময় আইনমন্ত্রী বলেন, ‘পরিস্থিতিতে অবনতির চেষ্টা করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আপিল বিভাগের রায়ের কোনো অংশ পরিবর্তন করতে পারবে না সরকার। শূন্যপদে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে।’

অন্যদিকে কোটা সংস্কারের দাবি মেনে নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান আইনমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং সকল শিক্ষার্থীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তার পরিবেশ সরকার তৈরি করবে। সরকার সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগের রায় প্রতিপালন করেছে। আপিল বিভাগের রায়ের একটি দাড়ি, কমা, সেমিকোলন পরিবর্তনের ক্ষমতা আমাদের নেই। যেহেতু নেই তাই আমরা সেভাবেই রায় প্রতিপালন করেছি।’

কোটা সংস্কারের পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে এখনো বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করা হচ্ছে। এসব দাবি মানা না হলে শিক্ষার্থীরা আবারো আন্দোলনে যাবে- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে আমি একটি কথা বলতে চাই, মূলত এটি ছিল কোটা সংস্কার চেয়ে আন্দোলন। আমরা বলতে চাই, সংস্কার চেয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আমরা সংস্কার করেছি। এখন তাদেরও একটা কর্তব্য আছে। সেটা হলো তাদের নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে পড়াশোনা করা। এটাই তাদের কাছে আমার আহ্বান।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমরা সচেষ্ট। আপনারা আশা করতে পারেন শিগগিরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে যাবে।’

সরকারবিরোধী চক্র শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে পুঁজি করে সহিংসতা করেছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।

সংবাদ সম্মেলনে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সংঘর্ষে জড়ানোর জন্য দায়ী দুর্বৃত্তরা। ক্যাবল লাইন বিচ্ছিন্ন হওয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ইন্টারনেটের অনুপস্থিতিতে আমরাও বিপদে পড়েছি। আমরা কিন্তু গ্লোবালি কমিউনিকেশন করতে পারিনি। আমরা যখন পারিনি, দুর্বৃত্তদের যে সিন্ডিকেট বিদেশ থেকে তারা ভুল তথ্যের প্রচারণা চালিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘পুরোপুরি এক পক্ষ থেকে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। আর এসবের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার হয়েছে। আক্রমণগুলোর বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। এছাড়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারের যে যোগাযোগ, তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যে শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে- সে বিষয়েও কোনো তথ্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নেই।’

এসএস