দেশে এখন
0

চলমান পরিস্থিতিতে থমকে গেছে দেশের পরিবহন অর্থনীতি

চলমান কোটা আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে দেশের পণ্য পরিবহন খাতে। সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কে পক্ষ-বিপক্ষের পাল্টা অবস্থান ও সংঘাতময় কর্মসূচিতে দীর্ঘ সময় আটকা পড়ছে হাজার হাজার পণ্যবাহী যানবাহন। দেখা দিয়েছে পণ্যবাহী পরিবহনের সংকট, এর সাথে বাড়ছে ভাড়া। যান ও জীবন নিয়ে আতঙ্কিত রয়েছেন চালক, পরিবহন মালিক ও ব্যবসায়ীরা। এজন্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনীতি।

কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়েছে দেশের সড়ক-মহাসড়ক। পক্ষ বিপক্ষের অবস্থান-অবরোধ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঝুঁকির মধ্যেই চলছে সড়ক-মহাসড়কে পণ্য পরিবহন।

এ অবস্থায় চালক, পরিবহন মালিক ও ব্যবসায়ীদেরও আতঙ্ক বাড়ছে। আমদানি-রপ্তানির প্রাণকেন্দ্র বন্দর-স্থলবন্দরে ব্যাহত স্বাভাবিক কার্যক্রম। বাধ্য হয়ে রাতেই মহাসড়ক ব্যবহার করছেন অনেকে। পরিবহন সংকটে বাড়ছে ভাড়াও।

একজন গাড়ি চালক বলেন, '২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা দামের গাড়ি। আন্দোলন হলে আমাদের ভয় থাকে, যাত্রীর ভয় থাকে, গাড়ির ভয় থাকে। সেজন্য গাড়ি নিয়ে বের হই না এরকম সময়ে।'

দেশের লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রতিদিন চলাচল করে সারাদেশের ১০ থেকে ১৫ হাজার যানবাহন। বন্দর ঘিরে এই সড়ক সচল থাকলে গতি পায় আমদানি-রপ্তানি কেন্দ্রিক অর্থনীতির চাকা। কিন্তু গত কয়েক দিনের আন্দোলনে ঢাকা অংশের বিভিন্ন প্রবেশমুখ এবং কুমিল্লা, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও ফেনীসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দু'পক্ষের সংঘর্ষ হয়। ভাঙচুর হয় গাড়িও। দীর্ঘসময় যানজটে আটকা পড়ে পণ্যবাহী পরিবহন। এ অবস্থায় সড়কে কমেছে পরিবহনের সংখ্যা। বাড়ছে বিভিন্ন রুটের ভাড়াও।

বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান ট্রাক প্রাইম মুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মুনিরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, 'রাষ্ট্র যখন স্বাভাবিক গতিতে চলে না, তখন সবাই অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ পরিস্থিতিতে আমরা পরিবহন সেক্টরের লোকরাও ক্ষতিগ্রস্ত।'

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মতো একই অবস্থা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের। ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জয়পুরহাট, নাটোর ও গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার উৎপাদিত কৃষিপণ্য পরিবহনে ব্যবসায়ীদের শঙ্কা বাড়ছে। এ অঞ্চলে চাষ করা ৭৫ হাজার হেক্টর সবজির বাজার ও পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তিত আছেন কৃষকরাও।

একজন ব্যবসায়ী বলেন, 'পণ্যটা ঠিকমতো না পৌঁছালে তা নষ্ট হয়ে যায়, তখন আমাদের তবিলই গায়েব হয়ে যাবে। এই কাঁচা পণ্যগুলো একদিন গাড়িতে থাকলে, বাসি হয়ে গেলে তা পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাবে।'

এছাড়াও খুলনা-বরিশালসহ সিলেট অঞ্চলেও বাড়ছে সংকট। হাজার হাজার যানবাহন সড়কে আটকা পড়ে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না। বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। বেশি বিপাকে পড়তে হয় মাছসহ পচনশীল পণ্য নিয়ে।

স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী বলেন, 'বেনাপোলে যে পণ্যগুলো যায় কোনো পার্টিই যায় না। আমরা নিজেরা নিয়ে যাই। আমাদের নিজেদের দায়িত্বে নিয়ে যেতে হয়।'

একজন চালক বলেন, 'গাড়িতে ভাঙচুর হতে পারে যেকোনো সময়। ভাঙচুর হলে তো মহাজনরা এটা মেনে নেবে না। আর আমার হলো খাদ্যপণ্যের গাড়ি, আমাকে তো বের হতে হবেই।'

কারখানায় যথাসময়ে পণ্য না পৌঁছাতে পারায় উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী হলে পরিবহন খাতে শত কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি দাঁড়াবে বলে মনে করছেন পরিবহন মালিকরা।

বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান ট্রাক প্রাইম মুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব চৌধুরী জাফর আহমদ বলেন, 'পণ্য পরিবহন যারা করে তারা খুব ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। আমরা আতঙ্কে আছি যে কালকে কী হবে। প্রতিটি জেলাতেই একই অবস্থা।'

পণ্য পরিবহন ব্যাহত হওয়ায় এ খাতে জড়িত চালক ও সহকারীসহ লাখ লাখ শ্রমিকরাও বিপাকে পড়েছেন। নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। তবুও জীবন ও জীবিকার তাগিদে চার চাকায় ভর করে দিনরাত ছুটে চলছেন সড়ক থেকে মহাসড়কে।

এসএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর