দেশে এখন
0

ডিজিটাল আখের রসের মেশিন বানিয়ে সাড়া ফেলেছে সৈয়দপুরের উদ্ভাবক

দেশে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল আখের রসের মেশিন তৈরি করে সাড়া ফেলে দিয়েছে মঈন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এর অন্যতম স্বত্বাধিকারী রুবাব আনসারী এই মেশিনের উদ্ভাবক। ৭৫ হাজার টাকার এই মেশিন উদ্ভাবনে খরচ হয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরও অনেক মেশিন আধুনিকায়নের প্রতিশ্রুতি তাদের।

তীব্র গরমে যখন প্রাণ ওষ্ঠাগত, তখন খানিক বৃষ্টির আশায় যেন চাতক পাখির মত চেয়ে থাকা। কিন্তু সেই আর্তনাদও যখন ব্যর্থ, সে সময় ক্লান্তি কাটাতে খানিকটা স্বস্তি দেয় পানীয়। এই কোমল পানীয়, ফলের জুস ইত্যাদির মধ্যে পথচারীসহ সবার পছন্দের তালিকায় থাকে আখের রস।

আস্ত আখ থেকে রস আলদা করতে হাতে চালানো মেশিন থেকে কালক্রমে আসে মোটরচালিত মেশিন। কিন্তু, ইদানিং ধুলো-দুষণসহ বিভিন্ন কারণে রাস্তার পাশের এসব দোকান থেকে আখের রস খাওয়াতে কিছুটা অনীহা দেখা দিয়েছে। সেই চিন্তা থেকে সৈয়দপুরে তৈরি হয়েছে দেশের প্রথম স্বয়ংক্রিয় রসের মেশিন। যেখানে আখ একবার প্রবেশ করিয়ে হাতের কোনো স্পর্শ ছাড়াই পুরো রস বের হয়ে আসে।

একজন বিক্রেতা বলেন, 'আখটা যদি আমি একবার দেই তাহলে দ্বিতীয়বার আর দেয়া লাগে না। এতে কোনো ধুলা, ময়লা লাগে না। মেশিনটা সব দিক থেকে বন্ধ করা আছে যার জন্য এতে খুব খালো সারা দিচ্ছে ক্রেতারা।'

সৈয়দপুরের মঈন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের অন্যতম স্বত্বাধিকারী রুবাব আনসারী তার নিজের চিন্তা ও প্রচেষ্টায় তৈরি করেছেন এ মেশিন। ১১০ কেজি ওজনের এই মেশিন প্রথমবার তৈরিতে সময় লেগেছে প্রায় ছয় মাস। গবেষণায় ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকা।

তিনি বলেন, '৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা আমার এই মেশিনে ইনভেস্ট করতে হয়েছে। কারণ এটা প্রসেস কয়েকবার করতে হয়েছে। একবার বানায় নষ্ট হয়, আবার বানাতে হয়। আমরা এখনও চেষ্টা করছি এই মেশিন আরও ভালো করার।'

মেশিনে ব্যবহৃত ছয়টি রোলার তৈরি করতে হয়েছে বারবার। পিনিয়ামগুলো বানাতে হয়েছে নিখুঁতভাবে। এর সাথে ডিজিটাল মিটার যোগ করা হয়েছে রোলারের ঘুর্ণন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। সঠিক লোড নিরুপনের জন্য মোটরের অ্যাম্পিয়ার পরিবর্তন করতে হয়েছে বারবার। তবে, শেষ পর্যন্ত নতুন কিছু উদ্ভাবনের আনন্দ ভুলিয়ে দিয়েছে সব কষ্ট। প্রথম মেশিনে ছয় মাসের পরিশ্রম থাকলেও, এখন একটা মেশিন বানাতে তিন থেকে চারদিন লাগে।

একজন কারিগর বলেন, 'খুব চেষ্টা করে আমরা মেশিনটা বানাইছি। বারবার পদ্ধতি চেঞ্জ করে এটা বানাইছি। মেশিনটা বানানো শেশ হওয়ার পর আমাদের খুব ভালো লাগছে যে আমরা এখন সাকসেস।'

পরীক্ষামূলকভাবে সৈয়দপুরে একটি মেশিন বাজারজাত করার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাধ্যমে সে খবর ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। এখন প্রতি চার দিনে একটি করে নতুন মেশিনের অর্ডার পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। একেকটি মেশিনের দাম পড়ছে ৬৫ থেকে ৭৫ হাজার টাকা।

শুধু আখের রসের মেশিনই নয়, খড়কাটা, ফিড মেশিনসহ বিভিন্ন কৃষি সহায়ক মেশিন আধুনিকায়নের কাজ করছেন রুবাব আনসারী। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করা এই উদ্ভাবক তার পুরো মনোযোগ দিয়েছেন আধুনিকায়নের মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশের অর্থ সাশ্রয়ে। তবে, গবেষণার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থের যোগান।

রুবাব আনসারী বলেন, 'আমাদের যেটা হয়, শুধু একটা দেখে সেটার পদ্ধতি চেঞ্জ করে নতুন করে তৈরি করা হয়। এটা যদি বন্ধ করে য়া হয় তাহলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হয় এ মেশিন আমাদের গর্ব।'

রুবাবের মতো উদ্ভাবকদের সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসতে চায় প্রশাসন। কোন পদ্ধতিতে সহযোগিতা করা যায় এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে ঠিক করা হবে কর্মপরিকল্পনা।

সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: নুর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, 'তিনি ব্যক্তিগতভালো মেশিনটি বানাচ্ছেন। তবে এটি সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পরা দরকার। সরকারিভারে যদি সহায়তার সুযোগ আমাদের কাছে আসে বা তারা আমাদের কাছে আবেদন জানালে আমরা মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানাতে পারি।'

নীলফামারীর সৈয়দপুরে চার শতাধিক হালকা প্রকৌশল শিল্প কারখানা থাকলেও হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে মেশিনের আধুনিকায়ন নিয়ে। ঠিকঠাক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সরকারের আমদানি নির্ভরতা অনেকখানি কমিয়ে আনা সম্ভব বলে দাবি করেন তারা।

এসএস